চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে ইউক্রেনের বিমান (অ্যান্টোনভ এএন১২৪-১০০এম)।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিমানটি অবতরণ করে।
বিমানটি হংকং থেকে এসেছে। এটি যাওয়ার কথা রয়েছে ভারতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে। এটি পৃথিবীর অন্যতম কার্গো বিমান। যার চারটি ইঞ্জিন রয়েছে।
শাহ আমানত বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ ধরনের বিমান প্রায়ই চট্টগ্রামে নামে, শুধুমাত্র রিফুয়েলিং করার জন্য। এ বিমানটিও একাধিকবার চট্টগ্রামে নেমেছিল। তবে, বিমানটি নামার কথা ছিল ঢাকায়, কিন্তু ঢাকাতে যেহেতু কাতারের আমীর ছিলেন। তাই তারা বিমানটি দ্রুত চট্টগ্রামে পাঠিয়েছে এবং এটি অবতরণ করেছে। বিমানটির ক্রুরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। রিফুয়েলিং সম্পন্ন হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) ভোর নাগাদ বিমানটি চট্টগ্রাম ত্যাগ করবে, বিশেষ করে আহমেদাবাদ চলে যাবে।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের বিমান নামার মূল কারণ হলো, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। এটি একেতো বিশাল আকারের বিমান, যেহেতু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ে স্ট্রং করা হয়েছে। তাই বিমানটি এখানে নামতে পেরেছে। এটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ ধরনের বিমান নামলে বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু রাজস্ব পায়। যেহেতু বিমানটি অবস্থান করছে, ক্রুরা অবস্থান করছে এবং রিফুয়েলিং করছে।
অ্যান্টোনভ এএন-১২৪ কি এখন সবচেয়ে বড় বিমান?
ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে দুই বছর আগেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান ছিল অ্যান্টোনভ এএন-২২৫ ম্রিয়া। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর ওই কার্গো বিমানটি ধ্বংস করে দেয় রাশিয়া। এরপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো বিমানের তালিকায় উঠে আসে একই প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টোনভ এএন-১২৪ এর নাম। বলা হয়ে থাকে ১ লাখ ২০ হাজার কেজি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার কেজি পর্যন্ত ওজনের পণ্যপরিবহন করতে পারে ইউক্রেনের বিমানটি।
ইউক্রেনের এ বিমানটি অন্যতম বড় পণ্যপরিবহন বিমান বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা।
অ্যান্টোনভ এএন-১২৪ সম্পর্কে কী জানা গেছে?
বিমান সংস্থা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, এএন-১২৪ এর নকশার কাজ শুরু হয় ১৯৭১ সালে। এরপর ১৯৭৩ সালে এয়ারক্রাফট তৈরির সবকিছু প্রস্তুত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭৯ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুইটি প্লান্টে ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু হয়। বিমানের সিস্টেম ও যন্ত্রাংশ তৈরি ও সংযোজনে সেসময় ১শ’র বেশি কারখানাকে যুক্ত করা হয়েছিল। সব চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এন-১২৪ বিমান ওড়ার জন্য প্রস্তুত হয়। এর ৩ বছর পর প্যারিস এয়ার শো-তে এটির উন্মুক্ত প্রদর্শনী করে অ্যান্টোনভ।
১৯৮৬ সালে বিমান পরিসেবাতে ঢোকার পর থেকে এন-১২৪ মডেলের ৫৫টি এয়ারক্রাফট তৈরি করে অ্যান্টোনভ। এর মধ্যে বর্তমানে ২৬টি বেসামরিক খাতে চালু আছে। এএন-১২৪ এর ১০০ ও ১০০এম-১৫০ মডেলের মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে।
এরপর ২০০০ সালের প্রথম দিকে চ্যাপ্টার-৪ নয়েজ রেগুলেশন পূরণের জন্য ইঞ্জিনের উন্নতি, সার্ভিস লাইফ বাড়ানোর জন্য কাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি চারটি ইঞ্জিন অপারেশনের জন্য এভিওনিক্স এবং সিস্টেমেও পরিবর্তন করা হয় ওই সময়।
এএন-১২৪ বিমানে মূলত ডাবল ডেক লে-আউট রয়েছে। উপরের ডেকে ককপিট, রিলিফ ক্রু কম্পার্টমেন্ট ও ৮৮ সিটের প্যাসেঞ্জার কেবিন এবং নিচে কার্গো (পণ্য রাখার স্পেস)। বিমানটি ওড়ানোর জন্য কমপক্ষে ছয় জন ক্রু প্রয়োজন হয়। পাইলট এবং কো-পাইলট, দুইজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, নেভিগেটর এবং কমিউনিকেশন অফিসার থাকেন এই ক্রু দলে।
ভারী লোডসহ পরিচালনার জন্য বিমানটিতে মাল্টি-লেগ ল্যান্ডিং গিয়ার সংযুক্ত রয়েছে। ২৪টি চাকার কারণে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার কেজি ওজন নিয়ে অনেকটা অনায়াসে অবতরণ করতে পারে এন-১২৪ মডেলের বিমান।