আগামী ২২ এপ্রিল শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেএনএফের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের কারণে সেই বৈঠক ভেস্তে গেল। সংলাপ বন্ধ ঘোষণা করল শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা পরিষদ সভা কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শান্তি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ক্য শৈ হ্লা ।
তিনি বলেন, তারবীর নামাজীদের উপর হামলা, অর্থ লুটের উদ্দেশে সোনালী ব্যাংকে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর অস্ত্র লুট করে নেয় তারা। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এসব কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জারলম বম জানান, আমরা শান্তিপ্রিয়। ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি এবং কেএনএফের সঙ্গে যোগযোগ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পুরো বম জনগোষ্ঠী কেএনএফের সঙ্গে নয়। অনেকে তাদের সঙ্গে আছে, আবার অনেকে নেই। তাই পুরো বম জনগোষ্ঠীকে এসব কারণে দায়ী না করা হয়।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, শান্তি প্রতিষ্ঠা জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে ১৮ সদস্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কয়েক দফা ভিডিও কনফারেন্সের বৈঠকের পর প্রথম সরাসরি বৈঠকে চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এভাবে ধীরে-ধীরে শান্তির পথে এগোচ্ছিল সবাই। তবে হঠাৎ অবস্থান পাল্টে চরমপন্থা বেছে নিল কেএনএফ।
ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান: এদিকে ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অপহৃত রুমা শাখার ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে উদ্ধার করতে এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী।
পাহাড়ে যৌথ অভিযান সম্পর্কে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের অভিযান শুরু করেছে। সকল জায়গায় টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা পারব আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক লুট করার চেষ্টা করে। পরে লুট করতে না পেরে মসজিদ থেকে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
তিন উপজেলার ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ: নিরাপত্তাজনিত কারণে বান্দরবানের ৩ উপজেলা থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়িতে সব ধরনের ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনালী ব্যাংকের এজিএম ওসমান গনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক লুট করার চেষ্টা করে। পরে লুট করতে না পেরে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তারপর সিআইডি এসে অক্ষত অবস্থায় ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ভল্ট থেকে বের করে।
পরে বুধবার দুপুর ১টার দিকে আবার থানচি বাজারে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে কেএনএফ। এ সময় তারা (কেএনএফ) দুই ব্যাংকের ক্যাশ থেকে মোট ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তারাই বিবেচনা করবে। তারা জানিয়েছেন দুই উপজেলার ব্যাংকের কার্যক্রমগুলো জেলা থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে।