প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তাঁর সাম্প্রতিক সফরকালে কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ তোলেননি।
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কেউই কোন কথা বলেনি। এ ধরনের কোন কথা হয়নি এবং কেউ এ ধরনের কথা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি।”
শুক্রবার গণভবনে তাঁর সাম্প্রতিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান সহ অন্যান্য সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান ও সংস্থার কর্তাব্যক্তিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফিরে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কেউই কোন কথা বলেননি। এ ধরনের কোন কথা হয়নি এবং কেউ এ ধরনের কথা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮ সালে হয়ে গেছে না আমাদের। তারপরেও আবার কেউ তা চাইতে পারে। আর সিষ্টেমটাতো বিএনপিই নষ্ট করে ফেলেছে। কাজেই এরকম কোন কথা হয়নি।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে জেইক সুলিভানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়। গত মাসে, তিনি নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাতে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন এবং সেলফি তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলনের নামে লোক সমাগম করে যাচ্ছে, ভাল কথা। এতদিন চুরি চামারি করে যে অবৈধ অর্থ তারা বানিয়েছিল আর যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছিল সেগুলোর এখন ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকাতো যাচ্ছে। আমি সেভাবেই বিবেচনা করি। যত আন্দোলন করবে তাতে সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। তাই আমি বলেছি কিছু বলার দরকার নেই তারা আন্দোলন করতে থাকুক। কারণ এই টাকাগুলোতো বের হওয়াটাও দরকার।
তিনি আবারও অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষের জানমালের ক্ষতি করার বিষয়ে তথাকথিক আন্দোলনকারিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি মানুষের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে, ঐ রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা নাশকতার প্রচেষ্টা চালায় তাহলে তো ছাড়বোনা। কারণ আমাদের সাথে জনগণ আছে।
তিনি জনগণের ওপর আস্থা রেখে বলেন, আমাদের কিছু করা লাগবেনা। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দিবে। কারণ তারা যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল তখন সাধারণ মানুষই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এবারও তাই হবে।
বিএনপি’র এই অর্থের উৎস সম্পর্কে সাংবাদিকদের খোঁজ নেওয়ারও আহবান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিএনপি’র আন্দোলন ছাড়াও আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, ডেঙ্গু সহ চলমান অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের কার্যকর ভূমিকা সহ আসন্ন দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বিভিন্ন সমকালিন বিষয়ে খোলামেলা সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাশ করা, নির্বাচন কমিশন যেটা সম্পূর্ণ প্রধামন্ত্রীর দপ্তরে ওপর নির্ভরশীল ছিল সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, পৃথক বাজেট বরাদ্দ দিয়ে তাদের আরো শক্তিশালী করা এবং জনগণের মাঝে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের ভোটের যে অধিকার ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয় তা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া- এই কাজগুলোতো আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোট আন্দোলনের মাধ্যমে বহু রক্তের বিনিময়ে এসব অর্জন করেছে।
তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই কথাটা আমি বলেছি তাদেরকে, আমাকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবেনা। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করেছি এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারপর সেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে এবং একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামল ছাড়া অন্য যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কি উন্নতি দিয়েছে? এমনকি জনগণের মুখে এক মুঠো ভাত পর্যন্ত তুলে দিতে পারেনি। সারাবছর দেশের উত্তরবঙ্গ এমনকি দক্ষিণের অনেক জায়গাতেও দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো।
‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না। তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।
জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’-বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপির এই অভিযোগের কোনও উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না-দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।
এসময় প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখেন না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দরিদ্র বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সম্পাদকবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন করার সাহস যাদের নেই, তারা বিরোধী দল কীসের? সংসদের বাইরের কোন দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। এটা সকলের মনে রাখা উচিত।
বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে, বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না, বলা যায় না। রাস্তায় উচ্চবাচ্চকারীরা বিরোধী দলের মর্যাদা পায়না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন. আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি তোমাদের যা খুশি করো, কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো। এতগুলো টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক-মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। আপনারা কথা বলেন, কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সারাদিন কথা বলার পর বলেন, আমাদের কথা বলতে দেয় না। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো। আমরা যদি তার একটা কানাও (অংশ) করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না।
করোনা পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং পাল্টা-পাল্টি স্যাংশনে সারাবিশে^র মন্দাভাবের উল্লেখ করে সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্য মন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেল। আমরা তো তাও খেয়ে পরে আছি। একবার আমেরিকায় বা ইংল্যান্ডে যান, বিভিন্ন দেশে যান, দেখুন সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কত দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শুনলে এখন সবাই আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। যেটা আগে ছিলনা। আর এটা এমনিতেই হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপের ফলে সম্ভব হয়েছে।
রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় আমদানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। তখন তো রিজার্ভ বেড়েছিল। এরপর যখন সব খুলে গেল, সবকিছু আমদানি শুরু হলো। তখন রিজার্ভ কমবে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন রিজার্ভ ১ বিলিয়নও ছিল না। ছিল শূন্য দশমিক সাত বিলিয়ন। আমি যখন ’৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ছিল বিলিয়নের নিচে। যেটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারই বাড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, রিজার্ভ বেশি রাখা বেশি প্রয়োজন, নাকি দেশের মানুষের ভালো, মানুষের জন্য কাজ করা বেশি প্রয়োজন?
তাঁর সরকার বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিপুল পরিমান ভর্তুকি কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুত ব্যবহার করতেছে সবাই, ভর্তুকির সুযোগ নিচ্ছে অর্থশালী বড়লোকরা। এখন একটা স্লট ঠিক করব কতটুকু সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের জন্য আলাদা দাম। তার থেকে বেশি যারা করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি ওইভাবে একটা স্লট করতে।
তিনি বলেন, সব গুছিয়ে দেওয়ার পর এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি এসব শুনতে রাজি না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ৭৭ বছর বয়স। ১৫ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। এ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। বাবা-মা-ভাই সহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। আমি এখানে কিছু পেতেও আসিনি, নিতেও আসিনি। আমি এসেছি দেশের মানুষকে দিতে।
আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী কী অগ্রাধিকার পাবে এমন প্রশ্নে জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারো পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন বলেই নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করত, তাহলে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হতো না।
সরকারপ্রধান বলেন, কতগুলো দুর্যোগ এসেছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মী, অনেক সংসদ সদস্য মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণ সম্পৃক্ত ও দল সুসংগঠিত না হলে কোনো সমস্যা মোকাবেলা কঠিন হয়ে যায়। আমরা পারি শুধু একটাই কারণে আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ। যখনই মানুষের জন্য ডাক দিয়েছি তারা ছুটে গেছে মানুষের কাছে।
ডেঙ্গু সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নিজের ঘরবাড়ি না, ছাদ থেকে শুরু করে আশেপাশের অঞ্চল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রত্যেকটা এলাকাভিত্তিক সবাই যদি একটু উদ্যোগ নেয় তাহলে ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটা হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অবশ্যই প্রচেষ্টা আছে, প্রচেষ্টা চলছে। গবেষণাও চলছে। ইতোমধ্যে শুনলাম জাপান নাকি একটা টিকা আবিষ্কার করেছে। এগুলোতো আসলে সময়সাপেক্ষ।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশবাসীকে এইটুকু বলব, সবাই নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখেন। মশারি টানিয়ে ঘুমান। খালি ওষুধ দিয়ে দিয়ে হবে না।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় কলকাতার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু কলকাতার কথা বলছেন, হ্যাঁ তাদের অভিজ্ঞতাটা আমরা নেব, তারা কীভাবে করলো সেটা। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সচেতন। আমাদের আসলে জাতিগতভাবে একটু সচেতনতা নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করা দরকার। এটা খুব দুঃখজনক এত মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সব তো করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড সম্পর্কে বলেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের (সাংবাদিকদের) ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, কাজ করে। তাদের ভালো-মন্দ আপনাদের তো দেখতে হবে।
তিনি বলেন, মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, আমি ’৯৬ সালে সরকারে এসে আজকের টেলিভিশন রেডিওসহ সব বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেই। উন্মুক্ত করেছি বলেই শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী, সাহিত্যিক, টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছে। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।