শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি গ্রেফতার

একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজকে (৭৬) গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।


র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত মোন্তাজ গাইবান্ধা জেলার সদর থানার নান্দিনা গ্রামের মৃত শমেশ উদ্দিন ব্যাপারীর পুত্র। মামলা চলাকালে ২০১৬ সালে মমতাজ তার নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করে। সে মাঝে মাঝে গোপনে তার পরিবারের সাথে দেখা করতো।

আজ রোববার দুপুরে র‌্যাব-৩ টিকাটুলি কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল শনিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

র‌্যাব জানিয়েছে, মমতাজসহ এ মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের ৪ টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। মমতাজ জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা সদর থানার সক্রিয় সদস্য ছিল। মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি আব্দুল জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিল। জব্বারের সাথে যোগসাজসে মমতাজ শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ওই এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাত।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ১৯৭১ সালের ১ জুন সকাল ১০ টার দিকে মমতাজ, আব্দুল ওয়াহেদ, জাছিজার রহমান, আব্দুল জব্বার এবং রঞ্জু মিয়াসহ হেলাল পার্ক আর্মি ক্যাম্প থেকে একদল পাক হানাদার ও রাজাকারের সমন্বয়ে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে পূর্ব পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হামলা চালায়। ফুলকুমারী রাণী এবং সন্ধ্যা রাণীকে পাশবিক নির্যাতন করে। ওই ঘটনায় সেই বাড়ির মালিক দ্বিজেশচন্দ্র বাধা দিতে আসলে তারা তাকে গাইবান্ধা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে।

ওই সময় আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী থানা সদরের আরেকটি গ্রামের সামাদ মোল্লা, শাদা মিয়া, ফরস উদ্দিন ও সেকান্দার আলী মোল্লাকে বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, একই দিনে তারা দৌলতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে লাল মিয়া বেপারী, আব্দুল বাকী, খলিলুল রহমান, দুলাল মিয়া, মহেশ চন্দ্র মন্ডল’কে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও গাইবান্ধা সদর এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি গ্রামে (নান্দিনা, মিরপুর, সাহারবাজার, কাশদহ, বিসিক শিল্প নগরী, ভবানীপুর ও চকগায়েশপুর) সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবী হোসেনসহ মোট সাতজনকে গুলি করে হত্যা করে।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আব্দুর রউফ নামে এক ব্যক্তি ২০০৯ সালে গাইবান্ধা অধস্তন আদালতে মমতাজসহ ৫ জনকে আসামি করে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ৫ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।

র‌্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হক বাসসকে জানান, গ্রেফতারকৃত মমতাজকে ঢাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ