আমতলী উপজেলার চারটি পুরাতন ব্রীজ ও একটি ইউনিয়ন্ পরিষদ ভবনের পুরাতন মালামাল উন্মুক্ত পদ্ধতিতে টেন্ডার বন্ধ করে দিয়েছেন সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট আরিফ-উল হাসান আরিফ। টেন্ডার বন্ধের প্রতিবাদ করায় সিনিয়র ঠিকাদার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন গাজীকে লাঞ্চিত করে আরিফ নগদ ৮০ হাজার টাকা ও একটি দাবী মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার অফিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন গাজী এমন অভিযোগ করেছেন। ঘটনার এক ঘন্টা পরে ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের হস্তক্ষেপে উন্মক্ত টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর দেরটার দিকে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সামনে। এ্যাড, আরিফ নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. এমএ কাদের মিয়ার ছেলে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার গাজীপুর জিসি কুকুয়া শহীদ সোহরাওয়াদি স্কুল প্রাঙ্গণের ৬৯ মিটার পুরাতন ষ্টীল ব্রীজ, আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ৩০ মিটার আয়রন ব্রীজ, আমড়াগাছিয়া বাজার সংলগ্ন ৯০ মিটার আরসিসি ব্রীজ ও দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ৩৫ মিটার আয়রন পুরাতন ব্রীজ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এ চারটি পুরাতন ব্রীজ ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পুরাতন ভবন বিক্রির জন্য উপজেলা প্রকৌশল অফিস বৃহস্পতিবার উন্মুক্ত টেন্ডার আহবান করে।
এ চারটি পুরাতন ব্রীজ ও ইউপি ভবনের সরকারীভাবে ১৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৩২ টাকা মুল্য নির্ধারন করা হয়। এ উন্মক্ত টেন্ডারে ৬৯ জন ঠিকাদার অংশ নেন। কিন্তু উন্মুক্ত টেন্ডার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পুর্বেই সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও নব নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. এমএ কাদের মিয়ার ছেলে অ্যাড. আরিফ-উল হাসান আরিফ এ টেন্ডার বন্ধ করে দেয়। উপস্থিত ঠিকাদারের মধ্যে সিনিয়র ঠিকাদার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন গাজী টেন্ডার বন্ধের প্রতিবাদ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যাড. আরিফ-উল-হাসান আরিফ সিনিয়র ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন গাজীকে লাঞ্চিত করে তার কাছে থাকা নগদ ৮০ হাজার টাকা ও একটি দাবী মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এমন অভিযোগ ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন গাজীর।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনার এক ঘন্টা পরে ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে এ্যাড. আরিফের টেন্ডার বন্ধের প্রচেষ্টা ভন্ডুল করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে টেন্ডার আহবান করেন। পরে উপস্থিত ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নেন এবং সর্বোচ্চ মুল্যে ডাকা দরদাতারা পুরাতন মালামাল ক্রয় করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, অ্যাড. আরিফ-উল হাসান আরিফ নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে পুরাতন মালামাল পাইয়ে দিতে উন্মুক্ত টেন্ডার বন্ধ করে দেয়। এতে সিনিয়র ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন গাজী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করেছে।
সিনিয়র ঠিকাদার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন গাজী বলেন, চারটি ব্রীজ ও একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পুরাতন মালামাল ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত টেন্ডারে অংশ নেই। কিন্তু নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এমএ কাদের মিয়ার ছেলে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাড. আরিফ-উল হাসান আরিফ এ উন্মুক্ত টেন্ডার বন্ধ করে দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে লাঞ্চিত করে আমার সাথে থাকা নগদ ৮০ হাজার টাকা ও একটি দাবী মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাকে টেন্ডারে অংশ নিতে দেয়নি। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
অভিযুক্ত সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাড. আরিফ-উল হাসান-আরিফ টেন্ডার বন্ধ, ঠিকাদারকে লাঞ্চিত ও টাকা ঠিনিয়ে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ইউএনও পুলিশ চেয়েছিল আমি পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার টেন্ডার কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, উন্মুক্ত টেন্ডার বন্ধ করতে কেউ চেয়েছিল কিন্তু আমি ওই চেষ্টা ভন্ডুল করে দিয়ে উন্মুক্ত টেন্ডার করেছি।
তিনি আরো বলেন, উন্মুক্ত টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতারা চারটি ব্রীজ ও একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পুরাতন মালামাল ক্রয় করেছেন।