মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খাদ্য। কিন্তু এই খাদ্য অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায় যদি না সেটা নিরাপদ হয়। খাদ্য উৎপাদনের সময় ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ও ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভের ব্যবহার, অনিরাপদ ও নোংরা সরবরাহ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি ভেজালের কারণে খাদ্য হয়ে উঠতে পারে অনিরাপদ ও বিষাক্ত। এমনকি যথাযথভাবে রান্না না করলেও নষ্ট হয় এর উপকারী খাদ্য উপাদান। সবমিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা একটি ব্যাপক বিষয় এবং বিশাল এক চেইনের অন্তর্গত।
দেশের জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুড সিক্যুরিটি অথরিটি (বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ) যা ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিজেদের কর্ম তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদকর্মীদের জন্য বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) র সেমিনার কক্ষে যৌথভাবে এক কর্মশালার আয়োজন করে এই সংস্থাটি।
এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ন্যাশনাল ফুড সেফটি স্পেশালিস্ট এম. বোরহানুদ্দীন। প্রবন্ধের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ। তিনি কোডেক্স, নিরাপদ খাদ্য এবং বাংলাদেশ ফুড সিক্যুরিটি অথরিটি (বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ) নামক সংস্থাটির ভূমিকা ও নানা কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও সংগ্রহে যে নানা রকম সমস্যা রয়েছে তা তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি মনে করেন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দেশের সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়ার কোনও বিকল্প নাই।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন ফাওয়ের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান এবং পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ।
জাফর ওয়াজেদ বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে খাদ্য তখনই নিরাপদ হবে যখন এর উৎপাদন থেকে শুরু করে রান্না, পরিবেশন ও খাদ্য গ্রহণ পর্যান্ত গোটা প্রক্রিয়াটি যথাযথ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়। এসময় তিনি উদাহরণ হিসাবে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিক্রি করা রাস্তার খাবারের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে এসব খাবার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। পাশপাশি বড় বড় রেস্টুরেন্টগুলোতে কি ধরনের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে সে দিকেও সংস্থাটিকে নজর দিতে হবে। কেননা সম্প্রতি কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্টের খাদ্য মান নিয়ে জনমনে নানা উদ্বেগ ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপদ করার কাজটি বাংলাদেশ ফুড সিক্যুরিটি অথরিটির পক্ষে একা করা সম্ভব নয়, তাদের অত লোকবল নেই। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন সাংবাদিকরা।
বক্তব্য শেষে শুরু হয় মুক্ত আলোচনা। এতে অংশ নেন বাংলাদেশে আলো পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা আকতার সোমা, নিউজ পোর্টাল ওমেন্স নিউজ টুয়েন্টিফোরের সম্পাদক মাহমুদা আকতার, দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান, দেশতথ্য পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল বারী প্রমুখ, এশিয়ান এজের সিনিয়র রিপোর্টার প্রমথ রঞ্জন বিশ্বাস, দৈনিক ইত্তেফাকের নারী পাতার সম্পাদক রাবেয়া বেবি, দৈনিক সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার ছন্দা পারভেজ, বিটিভির রিপোর্টার নার্গিস জুঁই, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, সাংবাদিক ও পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম মেঘসহ আরও অনেকে।
যৌথভাবে কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস এবং খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত মিডিয়া সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালাটির (মিডিয়া সেনসিটাইজেশন ওয়ার্কশপ অন কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস এন্ড ফুড সেফটি) আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুড সিক্যুরিটি অথরিটি , জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) পরিচালিত অপুষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রজেক্ট এবং পিআইবি।
পিআইবি’র সিনিয়র প্রশিক্ষক পারভীন সুলতানা রাব্বীর সঞ্চালনায় এতে ৪০ জনের বেশি গণমাধ্যম কর্মী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া এতে খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ, ফাও এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও অংশ নেন।