ভোটের কালে ভাই ভাই, শীতের কম্বলের কালে মোরা নাই। হার ভাঙ্গা শীতে অনেক কষ্ট হরি। কেউ মোগো ধারে কোম্বল নিয়া আয় না। ভোট আইলেই মোগো কদর বাইর্যা যায়। মোগো তহন কোলের মধ্য লইয়্যা ছবি তোলে, আর কত আদর হরে। এ্যাহন কেউ নাই। আক্ষেপ করে এ কথা বলেছেন, আমতলী উপজেলার আঠারোগাঠিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সত্তর বছর বয়সি হাতেম আলী হাওলাদার।
তিনি বলেন, তীব্র শৈত্য প্রবাহে আমতলী উপজেলার জনজীবন বির্পযস্ত। কিন্তু প্রচন্ড শীতে রাজনৈতিক নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান, সাংসদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বাম্ভব্য প্রার্থীরা কেউ হতদরিদ্র, দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষের পাশে নেই।
আমতলী উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছেন। এ মানুষগুলো শৈত্য প্রবাহ সামাল দেয়ার মত শীত বস্ত্র নেই। এরা অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
এ উপজেলায় তিন হাজার ৯’শ কম্বল বরাদ্দ দিয়েছেন সরকারী। সরকারী বরাদ্দকৃত কম্বল ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা বিতরন করেছেন। কিন্তু তা অত্যান্ত অপ্রতুল।
অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা, ওই কম্বল তাদের কর্মী সমর্থকরাদের মধ্যে বিতরন করেছেন। কিন্তু প্রকৃত হত দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষ কম্বল পায়নি। কিন্তু এই শীতে হতদরিদ্র, দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষের পাশে রাজনীতিক নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সাংসদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাক্তি উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পাশে দাড়ায়নি। এতে হতদিরদ্র মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হতদরিদ্র দেলোয়ার মৃধা, মোশাররফ হাওলাদার, হালিমা, জয়বন, মহসিন ও মোস্তফা আক্ষেপ করে বলেন, রাজনৈতিক নেতারা এখন প্রয়োজন ছাড়া দরিদ্র মানুষের কাছে আসেন না। ভোট আসলেই রাজনৈতিক নেতারা ইনিয়ে বিনিয়ে আমাদের কাছে আসবে এবং আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে টানবে। কিন্তু এতো তীব্র শীত একজন নেতা দেখলাম না আমাদের পাশে দাড়িয়েছেন। এতো শীতে কিছুই পাইনি।
পশ্চিম সেনাখালী প্রামের সোহেল রানা বলেন, সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত শীত বস্ত্র প্রকৃত ব্যাক্তিরা পায়না। জনপ্রতিনিধিরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের কর্মী সমর্থকদের মাঝে বিতরন করে থাকেন।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, সরকারী বরাদ্দ ২৯৮ টি এবং আমার অর্থায়নে ৫০ টি কম্বল কম্বল বিতরন করেছি।
আমতলী পৌর কাউন্সিলর জিএম মুছা বলেন, এই শীতে বস্ত্রহীন মানুষের মাঝে প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতার এগিয়ে আসা উচিত। শুধু ভোটের রাজনীতির সময় আমরা তাদের পাশে দাড়াই। ভোট দিয়ে সকল হিসাব মেলানো যায় না।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার অর্থায়নে স্বাধ্যমত হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরন করবো।
আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতা আসবে যাবে কিন্তু জনগনের কোন উপকারে আসবে না। পোর খাওয়া রাজনীতিবীদরা সব সময় মানুষের পাশে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, সব সময় জনগনের পাশে আছি ও থাকবে। এই তীব্র শীতে সরকারী বরাদ্দ ছাড়াও নিজের অর্থায়নে বস্ত্রহীন মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরন করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকারীভাবে তিন হাজার ৯’শ কম্বল পেয়েছি। ওই সকল কম্বল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান, ৭ টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রের কাছে সরকারী সিদ্ধান্ত মতে ভাগ করে দিয়েছি। তাই তারাই শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরন করবেন।
বরগুনা- ১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমানের মাধ্যমে ২’শ কম্বল বিতরন করেছি। আমতলীতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে তাদের জন্য মাত্র দুই’শ কম্বল এতো খুবই নগন্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করছি।