শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আত্মপ্রকাশ

অসাম্প্রদায়িকতার কথা কেবল মুখে বললে হবে না, এটি চর্চা করতে হবে। চর্চা মানে কেবল বারবার বলা নয়। ধর্মের যে পবিত্র বাণীগুলো আমরা বলি তা কেবল মুখের বুলি হলে চলবে না। এ বিষয়গুলো অন্তরে ধারণ করতে হবে।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ এর ঢাবি সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সেই ব্যক্তি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। বিশ্বের যা কিছু অর্জন সবকিছু সভ্যতার জন্য। অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ আজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে সমাজের সর্বস্তরে আজ ঐক্য প্রয়োজন। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দেশি এবং বিদেশি কোনো অপশক্তি যেন বাংলাদেশের উন্নয়ন নস্যাৎ করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, আমরা যদি ধর্মের শাখা-প্রশাখা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ধর্মকে মূল উপজীব্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে এই ধর্মীয় উস্কানি সহিংসতা আসত না। কিন্তু আমরা যখন ধর্মের মৌলিক বিষয় থেকে দূরে সরে গেলাম তখন‌ই ধর্মীয় সহিংসতা ছড়াতে লাগল।

উপাচার্য আর বলেন, ‘বিশ্বসভ্যতায় যা কিছু মহান, যা কিছু অর্জন হয়েছে তা ধর্মকে আবর্তন করে নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধকে উপজীব্য করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এবং দেশের সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে সকল অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

নিজের ধর্মের প্রতি যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাশীল তিনি অন্য কোনো ধর্মকে ঘৃণা করতে পারেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের যা কিছু মহৎ অর্জন সবকিছুই অর্জিত হয়েছে একটা সাধারণ মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে। ‌ধর্মের ওপর ভিত্তি করে নয়। সেই মূল্যবোধটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান‌ও এই অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হয়েছিলেন। সেই কারণে মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠন এবং পটভূমি তৈরির পেছনে তিনি এই মূল্যবোধটি উপজীব্য বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং এটির মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হয়েছিলেন এবং সুমহান অর্জন স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন।

ঢাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্বসভ্যতায় যা কিছু অর্জন হয়েছে তা মানবিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। নিজের ধর্মের প্রতি যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাশীল সে অন্যের ধর্মকেও শ্রদ্ধা করতে জানে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধকে উপজীব্য করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এবং দেশের সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে সব অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

উপাচার্য আরো বলেন, বাংলার এই মাটি কোনোদিন সাম্প্রদায়িক ছিল না। যুগে যুগে অনেক শাসকগোষ্ঠী বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। কিন্তু তার একটাও এদেশে টেকেনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখনো অনেক সময় এরকম অনেক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। আমাদেরকে দেশি-বিদেশি অপশক্তির বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার বলেন, ‘সম্প্রীতির শুরু হয় পরিবার থেকে। তারপর যায় প্রতিবেশীর কাছে, সমাজে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার অনেক সমস্যাকে সূচনাকেই প্রতিরোধ করে। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার মুচকি হাসি। এ জন্য সব ধর্ম ভালো ব্যবহারের কথা বলে। মানুষের কল্যাণ করার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও বলেন, ‘সম্প্রীতি আমাদের গর্বের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য তুচ্ছ কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ডিজিটাল জগত, পত্র-পত্রিকার সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা সেসব দেখছি। এসব বিষয়ে আমরা সোচ্চার হচ্ছি, নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সব ধর্মের মূল কথা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হলে মানুষ তার প্রাপ্য বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। আমাদের উপমহাদেশ সম্প্রীতির ধারক ও বাহক। আমাদের ৬৫ শতাংশ যুবশক্তি। সম্প্রীতির সহাবস্থানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের পাঠ কার্যক্রমে, গণমাধ্যমে সর্বধর্মের মর্ম কথা প্রকাশ করতে হবে। আমরা সবাই যেন নিজের ধর্মকে ভালোভাবে জানি ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূচনা বক্তব্য রাখেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, ড. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রাসকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকার সহ-সম্পাদক স্বামী দেবধ্যানানন্দসহ সমাজের বিশিষ্টজন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।

নিউজফ্ল্যাশ/এসএস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ