সৌদি প্রবাসী দালাল সুমি আক্তার ও তার স্বামী টিটু মিয়ার খপ্পরে পড়ে অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন কহিনুর বেগম। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার কলা রং গ্রামে। দালাল সুমি ও তার স্বামীর বিচার চেয়ে রবিবার জনশক্তি কর্মসংস্থাণ ও প্রশিক্ষণ ব্যুারোতে কহিনুর অভিযোগ দিয়েছেন ।
দালাল সুমি আক্তার দাবী করেন কফিলের (সৌদি আরব বাসিন্দা) কাছ থেকে ৭ হাজার রিয়াদ নিয়ে কহিনুরকে সৌদি আরবে নেন।
জানাগেছে, ২০১২ সালে তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া গ্রামের সুমি আক্তার সৌদি আরবে যান। ওই খানে গিয়ে তিনি তার গ্রামের বাড়ী এলাকার বিভিন্ন মেয়েকে ভালো চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে নেন। ওই খানে নিয়ে তিনি বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচালিকা হিসেবে কাজ দিয়ে কফিলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। ভালো বেতন দেয়ার কথা বলে গৃহপরিচালিকাকে কফিলের কথা মত অনৈতিক কাজ বাধ্য করেন এমন অভিযোগ করেন কহিনুর বেগমের।
গত বছর ৮ নভেম্বর সুমি আক্তার ও তার স্বামী টিটু মিয়া এক লক্ষ টাকা নিয়ে কহিনুর বেগমকে হাসপাতালের ক্লিনার পদে চাকুরী দেয়ার কথা বলে সৌদি আরব নেন। ওইখানে নিয়ে সুমি তাকে এক বাড়ীর গৃহপরিচালিকার চাকুরী দেন। শুরুতে ভালো ব্যবহার করলেও ১৫ দিন পরে কফিল কহিনুর বেগমের সকল কাগজপত্র নিয়ে নেয় এবং ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ রেখে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হয়নি কহিনুর।
এক পর্যায় সুমি আক্তার ও তার স্বামী টিটু এসে কহিনুরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কফিলের (গৃহকর্তা) কথামত চলতে বাধ্য করেন।
কফিল কহিনুরকে ১১ মাস ধরে অমানষিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেন কহিনুর বেগম। কফিলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কহিনুর দালাল সুমি আক্তারকে তাকে দেশে পাঠাতে অনুরোধ করেন। সুযোগ বুঝে দালাল সুমি আক্তার ও তার স্বামী গৃহপরিচালিকা কহিনুরের কাছে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দাবী করেন। ওই টাকা দিলেই তাকে দেশ পাঠিয়ে দেবে বলে জানান দালাল সুমি।
নিরুপায় হয়ে কহিনুরের স্বামী শহীদুল ইসলাম এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দালাল সুমির মা নুরজাহানের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। গত ১৫ নভেম্বর কহিনুর দেশে ফেরেন। এ ঘটনায় রবিবার দালাল সুমি ও তার স্বামীর শাস্তি দাবী করে তিনি জনশক্তি কর্মসংস্থাণ ও প্রশিক্ষণ ব্যুারোতে অভিযোগ দিয়েছেন।
সৌদি ফেরত নির্যাতনের স্বীকার কহিনুর বেগম বলেন, দালাল সুমি আক্তার ও তার স্বামী টিটু মিয়া হাসপাতালে ক্লিনার পদে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এক লক্ষ টাকায় আমাকে সৌদি আরব নেয়। ওইখানে নিয়ে গৃহপরিচালিকার কাজ দেয়। ওই গৃহকর্তা আমাকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে এবং অমানষিক নির্যাতন চালায়।
পরে আমি বিষয়টি দালাল সুমি আক্তার ও তার স্বামীকে জানালে তারাও আমাকে গৃহকর্তার কথা মত চলতে বলে। আমি গৃহকর্তার অমানষিক নির্যাতন সইতে না পেরে দেশে আসতে চাই। এতে সুমি আক্তার ও তার স্বামী আমার কাছে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দাবী করে। তাদের দাবীকৃত টাকা দেয়ার আমাকে তারা দেশে পাঠিয়েছে। আমি দালাল সুমি ও তার স্বামীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে।
আমার এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। তিনি আরো বলেন, দালাল সুমির খপ্পরে পড়ে এলাকার অনেক নারী নির্যাতনের স্বীকার হয়ে পথে বসেছে। দালাল সুমি ও তার স্বামীর এমন কর্মকান্ডের বিচার দাবী করছেন তিনি।
দালাল সুমি তার যোগসাজসে কফিল (সৌদি আরব বাসিন্দা) কর্তৃক নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, কফিলের কাছ থেকে ৭ হাজার রিয়াল এনে কহিনুরকে সৌদি নিয়েছি। তার কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।
তালতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।