ঝালকাঠিতে ৫’শ হেক্টর জমিতে এ বছর সুপারি আবাদ হয়েছে। সমান্য পরিশ্রমেই সুপারির ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ঝালকাঠির সুপারি দেশবিদেশ যাচ্ছে।
পান বিলাসীদের কাছে সুপারী একটি অতি প্রয়োজনীয় ফল। ঝালকাঠির সুপারির চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। এমনকি এই সুপারি মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কিছু দেশে রফতানিও হচ্ছে।
ফিলিপাইন ও নিকোবর থেকে এক সময় আমদানীকৃত এশিয় পামগাছ এরিকা কাটচু জাতের এ ফলটি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় আবাদ হলেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বেশি জন্মে। তবে স্বাদ ও মানের দিক থেকে ঝালকাঠির সুপারির সুনাম একটু এগিয়ে।
বর্তমানে বাজারে কাটা সুপারি ৩০০-৪০০ টাকা কেজি এবং পাকা সুপারি গা (১০টি) ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। আর মৌসুমের এই সময়ে হাটগুলোতেও সুপারির বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা ঝালকাঠির হাটগুলোতে এসে সুপারি কিনে তা দেশের নানা প্রান্তে চালান করছেন। সেখান থেকে আবার বিদেশেও পাঠাচ্ছেন আড়ৎদাররা। সুপারির ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের দেশে প্রতিঘরে পান সুপারির চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিয়েসহ নানা আচার অনুষ্ঠান পান সুপারি ছাড়া পরিপূর্ণ হয়না ।
সরেজমিন বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের চৌরাস্তা সুপারির হাটে গিয়ে কথা হয় বেশকিছু পাইকারসহ খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে।
খুলনা থেকে ঝালকাঠির সুপারি কিনতে আশা পাইকার হায়দার আলী বলেন, ‘ঝালকাঠির সুপারির মান ভাল হওয়ায় প্রতিবছরের এই সময় আমরা এই চৌরাস্তার সুপারির হাটে আসি। এখান থেকে সুপারি নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাই। সেখান থেকে সুপারি বিদেশে রপ্তানী করা হয়।,
রাজাপুরের সুপারী চাষি কিসমত ফরাজী বলেন, ‘আমার আট বিঘা জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। প্রতিবছর আমি ৮-১০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করি। কিন্তু এবার তুলনামূলক সুপারির ফলন কম। তাই এবার ৪-৫ লাখ টাকার বেশি সুপারি বিক্রি করতে পারব না।,
মৌসুমের শুরুতে ঝালকাঠির কোন-কোন সুপারির হাটে প্রতিদিন বেচাকেনা ১০ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তবে ব্যবসায়ী ও পাইকারদের অভিযোগ দেশের সুপারির পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকলেও মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে সরকার বাড়তি সুপারি আমদানি করায় দেশীয় সুপারির বাজারে মন্দা ভাব দেখা দেয়। তাই দেশীয় সুপারির বাজারের প্রতি সরকারি নজরদারির আহবান ব্যবসায়ীদের।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সুপারি চাষ করে এই অঞ্চলের চাষিরা বেশ লাভবান। প্রতিবছর একেকজন চাষি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকারও সুপারি বিক্রি করেন। এ অঞ্চলের সুপারির চাহিদা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যেও সুপারির সম্ভাবনাময় বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই দিনদিন এই অঞ্চলে সুপারির চাষ বৃদ্ধিতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’ সুপারি চাষে তেমন কোন পরিশ্রম করতে হয় না। একবার গাছ রোপণ করার পর প্রতিবছর সামান্য পরিচর্চা করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।