১০ই ডিসেম্বর বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বর্ণনা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন গতকাল প্রতিদিনের ন্যয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় সমবেত হয়। আকষ্মিকভাবে বেলা ২টা থেকে পুলিশ সমবেত নেতা-কর্মীদের উপর হঠাৎ করেই বিনা উস্কানিতে অতর্কিতভাবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমান নেতা-কর্মীদের উপর ক্র্যাকডাউন শুরু করে। তারা বর্বরোচিতভাবে নির্বিচারে মুহুর্মূহু গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল, লাঠিচার্জ করতে থাকে। যা আপনাদের চোখের সামনেই ঘটেছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই কাপুরষোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনা স্বাধীন দেশে কল্পনাতিত।
তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন এবং অসংখ্য নেতা-কর্মী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। যাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নিরূপন করা যায় নাই।
ফখরুল আরও বলেন, পুলিশের হামলায় অনেক সাংবাদিক বন্ধুও আহত হন। পুলিশ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও বাধা দেয় এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও অশোভন আচরণ করে।
তিনি বলেন, আমি খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হই এবং আপনারা দেখেছেন আমাকেও আমার অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর মধ্যে পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাত বোমা নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এর পর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যাক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচ তলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে প্রবেশ করে এবং সকল আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি, তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এবং এমনি কি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়।
এসময় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশ বিএনপি’র কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাড. শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপি’র কুমিল্লা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুল খালেক, সহ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সেলিম রেজা হাবিব, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক মাহাতাব উদ্দিন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহ মো: নেছারুল হক, সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাবিকুল ইসলাম সহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে দলীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এমনকি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দফতরের কর্মচারী রেজাউল করিম, দলিল উদ্দিন, সেলিম, ফারুক, রফিক, সহ অন্যান্য কর্মচারীদের কেও পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এর পর পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিষ্ফোরনের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সাথে ডিবি, সোয়াদ বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল।
আওয়ামী গতকাল সমগ্র ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের সশস্ত্র ও উশৃঙ্খল কর্মীরা পাড়ায় মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার পরিজনের উপর হামলা করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মিল্লাত হোসেন (৬৭) কে বেদমভাবে প্রহার করে যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এসময় বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা তা উদ্ধারের তল্লাশী চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে- কোন বাড়িতে তল্লাশী চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সাথে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এই ধরনের তল্লাশী চালাতে হলে সার্স ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্ত গতকাল আমাকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বাইরে রেখে দীর্ঘ চার ঘন্টা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাংচুর করে, বোমা রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা জানেন সরকারের ব্যর্থ, অযোগ্য সরকারের দূর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসনে এবং অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী কার্যকলাপে দেশের মানুষ আজ চরম বিপর্যয়ে নিপতিত।