বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মানুষের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতি হচ্ছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা করতে গিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। প্রয়োজন গবেষণা ও সচেতনতা। গণমাধ্যম সচেতনতার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য এ কথা বলেন।
স্পাইনাল কর্ড আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের উপর গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে ‘পিপল উইথ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ডিসিমিনেশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ।
গবেষণার ফলাফল সামনে রেখে জানুয়ারী থেকে গবেষণার দ্বিতীয় পর্বের জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে গবেষণা শুরু হবে। সেখান থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, দৈনন্দিন কর্মকান্ড, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক জীবন বৃত্তান্ত এই গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনা হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ১৮টি ইনস্টিটিউট এবং প্রাইভেট চেম্বার থেকে মোট ২ হাজার ৪৬৯ জন আঘাতজনিত এবং রোগ সম্পর্কিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ( এসসিআই) রোগীকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৯৮(৬৮.৮%) পুরুষ এবং ৭৭১ (৩১.২%) মহিলা। বেশিরভাগ রোগী, ৮৬৪ (৩৫%), ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী গ্রুপের অন্তর্গত।
তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৯ জন (৫৭.১%) আঘাতজনিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোগী, ১ হাজার ১৪ (৪১.১%) রোগ সম্পর্কিত, আর ৪৬জন (১.৯%) কড়া ইকুইনা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। ভর্তির সময় ১ হাজার ৫১৬(৬১.৪%) জন এসসিআই আক্রান্ত ব্যক্তিকে টেট্রাপেন্টজিক এবং ৯৫৩ (৩৮.৬%) জনকে প্যারাপেন্টজিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল।
রোগ-সম্পর্কিত এসসিআই এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল অবক্ষয় (৪২.৫%), তারপরে টিউমার (৪০.৩%) এবং পরে যক্ষ্মা (১১.৮%) আক্রান্ত রোগী। সাথে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্র্যাকচার। সবচেয়ে বেশি জটিলতা ছিল অস্ত্রের মূত্রাশয় (৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%)।
আঘাতজনিত সিএসআই-এর রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল উপর থেকে পড়ে যাওয়া (৪৫.৪৩%), এরপরে সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত (২৯.৩৮%)। বেশিরভাগ আঘাতমূলক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সাথে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্রাকচার । সবচেয়ে বেশী জটিলতা অন্ত্রের- মূত্রাশয় ( ৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%) ছিল।
সেমিনারে জানানো হয়, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবনের খুবই মূল্যবান কর্মক্ষম সময়ে এই রোগ হয় এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ লোক মেরুদন্ডের আঘাত বা রোগজনিত সমস্যায় ( এসসিআই ট্রমা অর ডিজিজ) ভোগেন। ইতিপূর্বে আমাদের দেশে এই রোগ নিয়ে তেমন কোন বড় মাপের ভালো গবেষণা হয়নি দেশে । এই রোগীদের কোন রেজিস্ট্রি ও সংরক্ষণ করা হয় না। এমন কি তাঁদের জরুরী ও পুনর্বাসন চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল ও অবৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এই গবেষণা একটি মাল্টি-ন্যাশনাল সমীক্ষা যেখানে ৪০টিরও বেশী দেশ জড়িত এবং সারা বিশ্বের ৬টি বিশ্বস্বাস্থ্য অঞ্চলে একযোগে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির উপর পরিচালিত প্রথম সমীক্ষা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, ডিজিএইচএস এর পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বক্তব্য রাখেন।