রাজধানী ঢাকার যানজট কমাতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই চালু হচ্ছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুভ উদ্বোধন করবেন।
আজ শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট-ফার্মগেট অংশ আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এই এক্সপ্রেসওয়ের পুরো কাজ শেষ হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ, বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত শেষ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের সর্বমোট কাজ শেষ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭.২৮ শতাংশ।
সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪.২২ শতাংশ।
প্রকল্পের নথি অনুসারে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই উড়াল সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
জানাগেছে, উড়াল সড়কের রুট হচ্ছে কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরো পথই রেললাইন ঘেঁষে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজধানীর চারপাশে আউটার সার্কুলার নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারই দেশে প্রথম চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, এক্সপ্রেসওয়ে করছে। পরবর্তী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে আউটার সার্কুলার সহ অন্যান্য পরিকল্পনা সময়মতো বাস্তবায়ন হবে।
এসময় বিএনপিসহ ৩২ দলের এক দফা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৩২ দলের এই জগাখিচুড়ির ঐক্যে এক দফার আন্দোলনের পতন অনিবার্য। যে লক্ষ্য নিয়ে জগাখিচুড়ির এই ঐক্য তাতে ফল আসবে অসহনীয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার যেমন আছে তেমনই থাকবে। একটা ঢেউও তো জাগাতে পারেনি। তাদের আন্দোলনে নেতা কে? ক্যাপ্টেন ছাড়া কি জাহাজ চলবে? এই জগাখিচুড়ি ঐক্যে দফায় দফায় পরিবর্তন। এই ৩২ দল টিকবে কিনা তার গ্যারান্টি নেই। আগেতো ছিল ৫৪ দল। এই জগাখিচুড়ি ঐক্যের পতন অনিবার্য।
মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আগমন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল আসছে নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে নয়। তারা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে আসছেন। আর ইইউ প্রতিনিধি দল আসছে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল কিভাবে পর্যবেক্ষণ করবে তা দেখতে।