শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা

সুপ্রিম কোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।
আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে এ ঘটনা ঘটে।

আজ বুধবার সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী-বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোলের এক পর্যায়ে হঠাৎ চড়াও হয় পুলিশ।

পুলিশের মারধরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের জাবেদ আখতার, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস তানভী, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, জাগো নিউজের ফজলুল হক মৃধা, সময় টিভির ক্যামেরাপার্সন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসির ক্যামেরাপার্সন মেহেদী হাসান মিম ও বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপার্সন ইব্রাহিমসহ বেশ কজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এটিএন নিউজের জাবেদ আখতারকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাজধানীর পান্থপথে বেসরকারি হাসপাতাল হেলথ এন্ড হোপে নিয়ে যাওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের আগের দিন মঙ্গলবার নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান মো. মনসুরুল হক চৌধুরী আকষ্মিক পদত্যাগ করায় ভোটগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। রাতে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী সাদা ও নীল প্যানেল পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধানের নাম ঘোষণা করেন। দিনভর পাল্টাপাল্টি শ্লোগান-বিক্ষোভ সমাবেশের পর রাতে সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ পর্যায়ে বুধবার সকাল থেকেই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী-বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মারমুখী অবস্থান নেয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বরাবরের মতো সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সেখানে সকাল ১০টা থেকে ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আইনজীবীদের হট্টগোলে তা শুরু করতে পারেনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রে দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোল শুরু হয়। তখন শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বিবদমান আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয়। এ খবর শুনে সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হন।

ফোনে কথা হয় হেলথ অ্যান্ড হোপে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক জাভেদ আখতারের সঙ্গে। জাবেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ নিচে ফেলে বুট দিয়ে উপর্যুপুরি লাথি দিয়েছে। লাঠিচার্জ করেছে। সারা গায়ে ব্যথা। পায়ের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে।

আরেক আহত সাংবাদিক ফজলুল হক মৃধা বলেন, ‘পুলিশ আমিসহ কয়েকজনকে ঘিরে ধরে পিটিয়েছে। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছি।’

গুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরম -এলআরএফ’র সভাপতি, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আশুতোষ সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পরিচয় দেওয়ার পরও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। এ সময় আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। সে অনুযায়ী আমরা এলআরএফের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে হামলা, হট্টগোলের মধ্যেও ভোটগ্রহণ চলছে। আওয়ামীপন্থীরা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপিপন্থীরা ভোটে অংশ না নিলেও এখন পর্যন্ত ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।

এলআরএফের নিন্দা

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরফ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সংবাদ সংগ্রহ গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে ছুটে গেলে পুলিশ অতির্কিতে হামলা চালায়। গণমাধ্যম কর্মীদের পরিচয়পত্র এবং মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা থাকা স্বত্তেও হামলার হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ