অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি শপিং মলে এক ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে অন্তত ছয় জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে ঐ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।
এই ঘটনার সন্দেহভাজন হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে হামলাকারীর পরিচয় বা তার এই ধরনের হামলা করার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী ছুরি হামলার ঘটনাটি ঘটে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার পরপর।
নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অ্যান্থনি কুক জানান যে সন্দেহভাজন হামলাকারী দুপুরে ৩টা ১০ মিনিটের দিকে শপিং মলে প্রবেশ করেন।
মি. কুকের ভাষ্য অনুযায়ী, এর কিছুক্ষণ পরপরই হামলাকারী শপিং সেন্টার থেকে বের হয়ে যান এবং ৩টা ২০ মিনিটের দিকে আবার শপিং মলে ঢোকেন এবং ছোরা হামলা শুরু করেন।
সিডনি শহরের পূর্বাঞ্চলের বন্ডি এলাকার ওয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টারে দুপুর তিনটার কিছুক্ষণ পর প্রবেশ করে সন্দেহভাজন হামলাকারী। এর কিছুক্ষণ পরই শপিং সেন্টারের পঞ্চম তলায় এই ঘটনা ঘটে।
পূর্ব সিডনির কেন্দ্রীয় এলাকার অন্যতম প্রধান শপিং মল ওয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টার। এটি বিখ্যাত বন্ডি বিচের কাছে অবস্থিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান হামলা চলাকালীন সময় শপিং সেন্টারের ভেতর ‘ভয়াবহ আতঙ্কের’ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভেতরে উপস্থিত মানুষজন ‘চিৎকার ও দৌড়াদৌড়ি’ করছিল বলে বলছিলেন তারা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন তিনি হামলাকারীকে একটি ‘বড় ছুরি’ হাতে তাদের দিকে ধেয়ে আসতে দেখেন।
“সে (হামলাকারী) আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং আমি শুধু শুনতে পাই ‘ওটা ফেলে দাও’ আর তারপর গুলির শব্দ পাই। তাকে একজন পুলিশ অফিসার পেছন থেকে গুলি করে। তাকে গুলি না করলে সে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেত।”
ঐ প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যে, হামলাকারী ‘খুনের নেশায় মত্ত’ ছিল। তিনি বলছিলেন যে তিনি একজন নারী ও একজন পুরুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী রাশদান আকাশাহ বিবিসি সাংবাদিক কেটি ওয়াটসনকে জানান যে এক তরুণ একটি লাঠি নিয়ে হামলাকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করছিল।
১৯ বছর বয়সী আকাশাহ শপিং মলের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। হামলাকারী হামলা শুরু করার পর আশেপাশের সবাই দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করে বলে জানান তিনি।
“আমি এক ব্যক্তিকে দেখি হামলাকারীর সামনে একটি পোল বা খুঁটি জাতীয় লম্বা একটা জিনিস দিয়ে এসকেলেটরের সামনে দাঁড়িয়ে তার পথরোধ করার চেষ্টা করতে। তিনি দূর থেকে সেটা দিয়ে ছুরি হাতে হামলাকারীকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।”
এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জন মারা গেছে বলে জানা যাচ্ছেছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জন মারা গেছে বলে জানা যাচ্ছে
হামলাকারী হামলার এক পর্যায়ে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অ্যান্থনি কুক জানান, “হামলাকারী যখন লেভেল ফাইভে পৌঁছে গেছে, তখন তাকে পেছন থেকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলেন একজন পুলিশ অফিসার।”
“তিনি তাকে সতর্ক করে যখন তার পেছনে পেছনে যেতে থাকেন, তখন এক পর্যায়ে সে ঐ অফিসারের দিকে ঘুরে ছুরি তোলে এবং অফিসারকে আক্রমণে উদ্যত হয়। তখন অফিসার গুলি করে এবং হামলাকারী মারা যায়।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এই ঘটনায় নিহত ও হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “দু:খজনকভাবে, একাধিক হতাহতের খবর জানা গেছে আর সব অস্ট্রেলিয়ানের সমবেদনা এখন যাদের আপনজন হতাহত হয়েছেন, তাদের প্রতি।”
নিউ সাউথ ওয়েলস অ্যাম্বুলেন্স বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে সিডনির বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে অন্তত আটজনকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অ্যান্থনি কুক জানিয়েছেন যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে ‘বেশ কয়েকজন গুরুতর ও আশঙ্কাজনক অবস্থায়’ রয়েছেন।
ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে হামলা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানায় নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ। আহতদের মধ্যে নয় মাস বয়সী এক শিশু রয়েছে বলেও জানানো হয় ঐ সংবাদ সম্মেলনে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।