রবিবার, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়: মির্জা ফখরুল

৫ আগস্টের বিপ্লবের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।’

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সভা হয়।

হতাশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছুসংখ্যক মানুষ- তারা নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’

কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারও নাম বলব না। কারও নাম বলতে চাই না। আপনারা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে যারা আজকে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনৈক্যের দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্র। এ জিনিসগুলো বুঝতে হবে। আমি কথাগুলো ইচ্ছা করেই আজকে তুলে ধরলাম।’

মির্জা ফখরুল দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচনের পথে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যারা সরকারের (উপদেষ্টা) দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের এমন কোনো কথা না বলার অনুরোধ করেছেন, যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লে­খ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’ এ সময় তিনি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সব পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির পোস্টের কথা উল্লে­খ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কী উন্মাদনা! যখন দেখি, আতঙ্কিত হই। পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও- এ ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন, কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের পেছনে। বুঝি না, বুঝলে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বের হতো না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, বহুবার জেলে গেছি, যেকোনো সময় আবারও জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমি যা বিশ্বাস করি, আমার দল যা বিশ্বাস করে, সেই কথা আমার প্রাণ গেলেও আমি বলব। আমি বিশ্বাস করি, উদারপন্থী গণতন্ত্রে, বিশ্বাস করি বাক-স্বাধীনতায়, ভোটের স্বাধীনতায়। আমি জানি, অনেকে অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আমি এতটুকুও চিন্তা করি না। কারণ, আমরা রাস্তায় থেকে লড়ে লড়ে এই জায়গায় এসেছি। সময়-সুবিধামতো পালিয়ে যাই না আমরা, সামনেই দাঁড়াই।’

সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা এই সমাজের শ্রেষ্ঠ লোকগুলো বসে আছেন। ছাত্রজীবনে আপনারা শ্রেষ্ঠ ছিলেন, কর্মজীবনেও শ্রেষ্ঠ। তাই আপনাদের সামনে এই প্রশ্নটা তুলছি। আর কত এই বিভাজন নিয়ে, আর কত ঘৃণা নিয়ে অমরা বাংলাদেশকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা করব। বারবার টেনে তোলা হবে, আবার পড়বে ঘৃণা নিয়ে। দানবীয় শক্তি দিয়ে আবার উঠবে, আবার পড়বে। এ কোন জাতি আমরা। এবার যে সুযোগ হয়েছিল সবাই মিলে একসঙ্গে একজোটে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসার। ছেলেরাও ছিল, আমরাও ছিলাম।’

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, ড্যাবের বর্তমান মহাসচিব আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ