মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘সবুজ বাংলাদেশ’ গড়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অধিক পরিমাণে গাছ লাগিয়ে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি। সবুজ বাংলাদেশ গড়তে সারাদেশে আমাদের সাধ্যমতো গাছ লাগাতে হবে বললেন তিনি।

শনিবার গণভবনে আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আষাঢ়ের প্রথম দিনটি থেকে সারাদেশে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযানে অবদানের জন্য কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে পুরস্কৃত করেন এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন।

পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন দেশে আওয়ামী লীগই প্রথম শুরু করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষক ও কৃষি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সেক্ষেত্রে কৃষক লীগের দায়িত্ব অনেক বেশি।

সরকার প্রধান বলেন, খাদ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় চাহিদা। তাই এই খাদ্যের জন্য কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ুর অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। যদিও জলবায়ুর ক্ষতি সাধনে বাংলাদেশের কোন ভূমিকা নেই কিন্তু বাংলাদেশ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়নের কর্মসূচি নিয়ে আমরা ওই অঞ্চলের মানুষকে সুরক্ষিত করেছি এবং এটা আরো সুন্দরভাবে আমাদের করতে হবে।

তিনি বলেন, গাছ আমাদের প্রাণ, এটি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন দেয়। কাজেই আমরা যতবেশি বৃক্ষ লাগাতে পারবো-এটি আপনাকে ফল দেবে, খাদ্য দেবে আবার অর্থ উপার্জনের পথও সুগম করবে।

প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে একটি করে ফলদ, বনজ ও ঔষুধি গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এইভাবে আমাদের দেশকে যদি আমরা সবসময় সবুজ করে রাখতে পারি তাহলে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। সেজন্য সকলকে আমাদের এভাবেই চিন্তা করতে হবে। তবে, একটা জিনিষের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ফসলি জমি যেন নষ্ট না হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামে আমাদের বহু জায়গা আছে। বেশি করে নদীর পাড়, যেসব এলাকায় ভাঙ্গন হতে পারে সেসব জায়গায় বড় শিকড় সমৃদ্ধ মাটি কামড়ে ধরে রাখার মত গাছ, উপকূলীয় অঞ্চল গুলোতে গাছ লাগাতে হবে এবং বাড়ির চারপাশ এবং ছাদে ছাদ বাগান করতে হবে।

তিনি বলেন, বহুতল ভবন আর উন্নয়নের নামে রাজধানীর ধানমন্ডী থেকে শুরু করে গুলশাল-বনানি এলাকায় অতীতে যেসব বড় বড় গাছ ছিল সেগুলো সবই উজাড় হয়েছে। ফলে আগে যে সবুজ ছিল সেটা এখন আর নেই। এখন অবশ্য ছাদ বাগান হচ্ছে, সবাই এদিকে ঝুঁকছে। সেটাও করতে পারেন সবাই। এতে বাড়িটাও ঠান্ডা থাকবে তেমনি নিজের হাতে বাগান করে নিজের গাছের তরিতরকারি খাওয়ার স্বাদই আলাদা।

কর্মসূচি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর তিনি গণভবনে দুই হাজারের মত গাছ লাগিয়েছিলেন। এরআগের গাছগুলো জাতির পিতার হাতে লাগানো। এরপর আমরা বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগাই এবং লাগাচ্ছি এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে দেখছি ভালই হয়। হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল সবই আছে আমাদের।

সরকার প্রধান বলেন, ‘এখন গণভবন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং একই সঙ্গে একটি খামার বাড়িতে পরিণত হয়েছে।’

তিনি সবাইকে আগাম ঈদ উল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে যত্রতত্র কোরবানীর পশু জবাই করে জায়গা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও সকলের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের আবাসস্থল এবং এর চারপাশে নিজেদেরই নজরদারি রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।

কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী অতীতের সরকারগুলোর নির্বিচারে গাছ কাটার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ছোটবেলায় দেখেছেন এয়ারপোর্ট থেকে বাংলা একাডেমী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আইল্যান্ডে থাকা কৃষ্ণচুড়া গাছে যখন ফুল ফুটতো তখন অপরুপ রুপে এই শহরটা জেগে উঠতো। জিয়াউর রহমান এক এক করে সব গাছগুলো কেটে ফেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, বিরোধী দলে থাকাকালেও আন্দোলনের নামে গাছ কেটেছে। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সালে কেবল আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়নি, আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছিল। বৃক্ষ নিধন করাই বিএনপি’র চরিত্র।

সরকার প্রধান বলেন, ‘তারা সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সম্পূর্ণ টাকাটাই মেরে দিত।’ আওয়ামী লীগ এখন উপকারভোগীদের সামাজিক বনায়নের ৭০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করছে এবং তাঁর সরকারই প্রথম ‘জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯ প্রনয়ন করে। সারের দামও কমিয়ে দেয় এবং এখনও ব্যাপক ভর্তুতি দিয়ে যাচ্ছে। যদিও একটি বিদেশি সংস্থা যে বিশ^ ব্যাংক ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল তাদের পরামর্শ ছিল কৃষিতে ভর্তুতি দেওয়া যাবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ‘বিএডিসি’ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। কোন মতে একটা অংশ বেঁচে ছিল। কারণ, বীজ উৎপাদন বেসরকারিখাতে হবে এবং বিদেশ থেকে আমদানী করবে। ওদের কিছু লোক ব্যবসায় জড়িত ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ গবেষণাগার গড়ে তোলায় দেশেই ভাল বীজ উৎপাদন হচ্ছে। এখন দেশে যে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল হয় এবং সব ধরনের শাক-সবজি ও ফলমুল ১২ মাসই পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আমাদের গবেষণারই ফসল।

জাতির পিতার ‘সবুজ বিপ্লব’ এর ডাক, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশকে রক্ষার কথা স্মরণ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন,বঙ্গবন্ধুর পদাংক অনুসরণ করে পরিবেশ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ ১৯৮৪ সাল থেকে গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নেয়। যখন দেশে সংসদও ছিল না। এমনকী সমগ্র বিশে^ও এভাবে পরিবেশের কথা আসেনি।

সরকার প্রধান বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী, কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগোভ তৈরির পাশপাশি উপকূলীয় অঞ্চলকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে হলে ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সমবায়ের মাধ্যমে কৃষির প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। যদি সেটা করে যেতে পারতেন আজকে বাংলাদেশের চিত্রটাই বদলে যেত।

বিএনপি’র চিন্তার দৈন্যতা’র একটি উদাহারণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি সহায়তা আসবে না বলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া এই দলটি ভালোভাবে নেয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি টিসিবিও বন্ধ করে দিয়েছিলো। এখন আমরা আবারও কার্যকর করছি। দুর্যোগকালিন কৃষকরা যেন উদ্বৃত্ত ফসল সংসরক্ষণ করতে পারে সেজন সাইলো নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তারাতো ন্যায্য মূল্যের দোকান ‘কসকর’ বন্ধই করে দিয়েছে। গুটি কয়েক মানুষের আর্থিক সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেসব জায়গা থেকে সুবিধা পাবে সেগুলো বন্ধ করে দেয় বিএনপি। বিএনপি’র কাজই হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেওয়া।

গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে বিএনপি’র আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এরাই জিয়ার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে সারের দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া। রোজার দিনে মজুরির দাবিতে আন্দোরত ১৭ জন শ্রমিককে গুলে করে হত্যা এবং কানসাটে সেচের জন্য বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত ৯ জনকেও গুলি করে হত্যা করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এ বিষয়ে খুব সচেতন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন তার প্রমাণ। জনগণের আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়াকে ৩০ মার্চ পদত্যাগ করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়। অর্থাৎ ভোটচুরির অপরাধেই তাকে ক্ষতাচ্যুত করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তিন ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো শিল্পায়ন করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমাদের মূল নির্ভরতা হচ্ছে কৃষির ওপর। কাজেই এই কৃষি অর্থনীতিটাকেই আমরা আরো উন্নত করে শিল্পায়নে যাব। যেজন্য আমরা সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কারণ, যততত্র শিল্প কারখানা গড়ে তুলে আমাদের তিন ফসলি জমি কোনমতেই নষ্ট করা যাবে না।

এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা নিজের ফসল নিজেরা উৎপাদন করবো। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা ১৯৭৪ সালে। নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য কিন্তু আসতে দেয়নি। কৃত্রিমভাবে সেখানে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতাকে যেভাবে হোক মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আর সেটাও যখন সফল হয়নি তখনই ১৫ আগষ্ট ঘটালো। এখনও কিছু লোকের কিন্তু সেই চেষ্টাই আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে যে যে ওয়াদা দিয়েছিলো তার সবই পূরণ করেছে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সাথে চুক্তি করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ