বাংলাদেশী ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছয় ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫৯ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ৫৩১ রানের পাহাড় গড়েছে সফরকারী শ্রীলংকা। কোন ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়াই টেস্টের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ^ রেকর্ড গড়েছে শ্রীলংকা। দিন শেষে ১৫ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেটে ৫৫ রান করেছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৭৬ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে লংকানদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৩১৪ রান। দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ, দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়া। এতে দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। অবশেষে দিনের ১৬তম ওভারে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ বলে ৫৯ রান করা চান্দিমালকে শিকার করেন সাকিব। পঞ্চম উইকেটে চান্দিমাল- ধনাঞ্জয়া ৮৬ রানের জুটি গড়েন।
প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ডাবল ও সেঞ্চুরির জুটিতে বাংলাদেশকে চরমভাবে ভুগিয়েছিলেন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু মেন্ডিস। কিন্তু এবার আর পারেননি তারা। জুটিতে ৩৬ রান যোগ হবার পর বিচ্ছিন্ন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭০ রান করে পেসার খালেদ আহমেদের বলে লেগ বিফোর আউট হন ধনাঞ্জয়া।
ধনাঞ্জয়া ফেরার পর প্রবাথ জয়সুরিয়াকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন কামিন্দু। অবশ্য এই জুটি ৮ রানের বেশি যোগ করতে পারতো না, যদি না বাংলাদেশের তিন ফিল্ডার মিলে জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলতেন। খালেদের করা ইনিংসের ১২১তম ওভারের শেষ বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন জয়াসুরিয়া। সেই সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। তার হাতে বল লেগে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেনের দিকে যায়। তিনি বল হাতে রাখতে পারেননি। এরপর শাহাদাতের হাত ছুঁয়ে বল যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো জাকির হাসানের কাছে। সামনে ঝাপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি জাকিরও। ৬ রানে জীবন পান জয়সুরিয়া।
এরপর ব্যক্তিগত ২৪ রানে জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। দু’বার জীবন পেয়ে ৩টি চারে ২৮ রানে সাকিবের বলে আউট হন জয়সুরিয়া।
দলীয় ৪৭৬ রানে জয়সুরিয়া থামার পর শ্রীলংকার রানের চাকা একাই ঘুড়িয়েছেন কামিন্দু। স্পিনার তাইজুলের বলে ব্যক্তিগত ৬০ রানে কামিন্দুর ক্যাচ ফেলেন হাসান। জীবন পেয়ে শ্রীলংকার রান ৫শ পার করেন কামিন্দু। সেই সাথে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান তিনি। কিন্তু শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো রান আউট হলে ৯২ রানে অপরাজিত থেকে যান কামিন্দু। তার ১৬৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
ছয় ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫৩১ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। এই নিয়ে ১১তমবার টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫শ বা ততোধিক রান করলো লংকানরা। সেই সাথে কোন ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ^ রেকর্ড গড়লো শ্রীলংকা। এত দিন এ রেকর্ডের মালিক ছিলো ভারত। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কানপুরে ছয় ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ৫২৪ রানের ইনিংস ঘোষণা করেছিল ভারত।
বাংলাদেশের সাকিব ৩টি, হাসান মাহমুদ ২টি ও খালেদ ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
দিনের শেষ ভাগে ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে ৪৭ রানের সূচনা এনে দেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ১৩তম ওভারে মাহমুদুলকে বোল্ড করে শ্রীলংকাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার লাহিরু কুমারা। ২টি চারে ২১ রান করেন মাহমুদুল।
ৃ
এরপর নাইটওয়াচম্যান তাইজুলকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন জাকির। ৫টি চারে জাকির ২৮ ও তাইজুল শূন্য হাতে অপরাজিত আছেন।
স্কোর কার্ড :
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস (প্রথম দিন শেষে ৩১৪/৪, চান্ডিমাল ৩৪, ধনাঞ্জয়া ১৫) :
নিশান মাদুশকা রান আউট (হাসান/লিটন) ৫৭
দিমুথ করুনারতেœ ব হাসান ৮৬
কুসল মেন্ডিস ক মিরাজ ব সাকিব ৯৩
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ক মিরাজ ব হাসান ২৩
দিনেশ চান্দিমাল ক লিটন ব সাকিব ৫৯
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এলবিডব্ল্ ুব খালেদ ৭০
কামিন্দু মেন্ডিস অপরাজিত ৯২
প্রবাথ জয়সুরিয়া এলবিডব্লু ব সাকিব ২৮
বিশ্ব ফার্নান্দো রান আউট (নাজমুল) ১১
লাহিরু কুমারা ব মিরাজ ৬
অসিথা ফার্নান্দো রান আউট (তাইজুল) ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-২) ৬
মোট (অলআউট, ১৫৯ ওভার) ৫৩১
উইকেটের পতন : ১-৯৬ (মাদুশকা), ২-২১০ (করুনারতেœ), ৩-২৬৩ (কুশল), ৪-২৮৯ (ম্যাথুজ), ৫-৩৭৫ (চান্দিমাল), ৬-৪১১ (ধনাঞ্জয়া), ৭-৪৭৬ (জয়সুরিয়া), ৮-৪৯৭ (ফার্নান্দো), ৯-৫১১ (কুমারা), ১০-৫৩১ (আসিথা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
খালেদ : ২০-২-৭১-১,
হাসান : ২৪-৫-৯২-২,
সাকিব : ৩৭-৫-১১০-৩,
মিরাজ : ৪৬-৭-১৪৬-১,
তাইজুল : ৩২-৬-১০৬-০।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস :
মাহমুদুল ব কুমারা ২১
জাকির অপরাজিত ২৮
তাইজুল অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-১, ও-১) ৬
মোট (১ উইকেট, ১৫ ওভার) ৫৫
উইকেটের পতন : ১-৪৭ (মাহমুদুল),
শ্রীলংকা বোলিং :
বিশ^ ফার্নান্দো : ৩-১-১২-০,
আসিথা ফার্নান্দো : ৪-০-২১-০ (ও-১),
লাহিরু : ৪-৩-৪-১,
জয়সুরিয়া : ৪-১-১৩-০।