‘স্বাধীনতা, সাম্য ও সম্প্রীতির জন্য কবিতা’-এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আগামী শনিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে (হাকিম চত্বর) ‘জাতীয় কবিতা উৎসব-২০২৫’ শুরু হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কবিতা উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান।
কবি মোহন রায়হান বলেন, পহেলা ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় উৎসব চত্বর থেকে উৎসব-র্যালি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। এরপর সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং মূল আলোচক হিসেবে থাকবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক ড. সলিমুল্লাহ খান। অনুষ্ঠানের দু’দিনেই নিবন্ধিত কবিদের স্বরচিত কবিতা ও আমন্ত্রিত কবিদের কবিতা পাঠ, দেশের খ্যাতিমান আবৃত্তিকারদের আবৃত্তি, গান, নৃত্য, সেমিনার থাকবে।
কবি মোহন রায়হান বলেন, বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্টদের দখলে থাকা জাতীয় কবিতা পরিষদকে মুক্ত করে আমরা এবার মুক্ত-স্বাধীন অবাধ নিরপেক্ষ ও জনগণের জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লড়াই সংগ্রামে দেশ ও জনগণের পাশে থেকে সত্য-সুন্দরের সাহসী উচ্চারণ ও ভূমিকা পালন। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নতুন কাব্য আন্দোলন করে তুলতে কবিতা পরিষদ নিরলস কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। এবারের উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক অঙ্গীকার রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা নিয়ে দেশ-জনতার কল্যাণের ভূমিকা রাখবে কবিতা পরিষদ।
কবি শাহীন রেজা বলেন, কবিতা পরিষদ একটি ভালোবাসার পৃথিবী রচনা করতে চায় এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাব। উৎসব আয়োজনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, জাতীয় কবিতা পরিষদ তার উন্মেষলগ্ন থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লাড়াই করে আসছে। আমি শুরু থেকেই কবিতা পরিষদের সঙ্গে ছিলাম। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনা নসাৎ করার জন্য যড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত আছে। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থানে একটি অসুস্থ সংস্কৃতির আবহ আমরা দেখতে পাচ্ছি। যার ফলাফল মোটেও ভালো না। বিপ্লবকে বেহাত করার জন্য যে ষড়যন্ত্র ক্রিয়াশীল আছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠি এটাকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে কবিতা পরিষদকে সতর্ক থাকতে হবে। বিপ্লবের ফসল ঘরে তোলার জন্য আরো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উৎসব পরিষদের সমন্বয়ক কবি মানব সুরত, সাংস্কৃতিক উপপরিষদের আহবায়ক কবি শ্যামল জাকারিয়া, অনুষ্ঠান উপ-পরিষদের আহ্বায়ক কবি নুরুন্নবী সোহেল, শৃঙ্খলা উপ-পরিষদের আহবায়ক কবি কামরুজ্জামান, যোগাযোগ উপ-পরিষদের আহ্বায়ক কবি রফিক হাসান, প্রচার উপ-পরিষদের আহবায়ক কবি আসাদ কাজল, সাংগঠনিক উপ-পরিষদের আহবায়ক কবি এবিএম সোহেল রশিদ, দপ্তর উপ-পরিষদের আহবায়ক কবি রোকন জহুর প্রমুখ।