রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট। ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতেই তারা জয়ী হয়ে অর্জন করেছে এক অনন্য ভূমিধ্বস বিজয়। শুধু তিনটি পদ সাধারণ সম্পাদক (জিএস), ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক জোটের হাতছাড়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম।
জিএস পদে জয় পেয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার, যিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। অন্যদিকে, ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবলার ও ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী নার্গিস খাতুন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে তিনিই একমাত্র নির্বাচিত প্রার্থী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা।
ভিপি পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে শিবির সমর্থিত সালমান সাব্বির সামান্য ব্যবধানে পরাজিত করেছেন ছাত্রদল সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষাকে।
এছাড়া অন্যান্য পদগুলোতেও শিবির সমর্থিত জোটের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে জাহিদ হাসান জ্বোহা, সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রাকিবুল ইসলাম, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক পদে আবু সাঈদ নাঈম, নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে সাঈদা হাফসা এবং সহকারী নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে সামিয়া জান্নাত জয় পেয়েছেন।
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে নাজমুস সাকিব, সহকারী পদে সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে মুজাহিদুল ইসলাম, সহকারী পদে আসাদুল্লাহ হিল গালিব, সহকারী পদে মুজাহিদুল ইসলাম সায়েম নির্বাচিত হয়েছেন।
বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন ইমরান লস্কর, সহকারী পদে নয়ন মুরসালিন। পরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং সহকারী পদে মাসুমা ইসলাম মোমো নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন দ্বীপ, সুজন চন্দ্র, ইমজিয়াউল আলি ও খালিদ হাসান।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ১৭ হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। দিনভর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। পরে এর সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা শুরু হয়।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারী হল দিয়ে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। নির্বাচনে ১০টি প্যানেলসহ রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন, হল সংসদে ১৫ পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন আর ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে ছয়টি নারী হলে ভোট পড়ার হার ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।