শনিবার, ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মিলে মিশে নিয়োগ পরীক্ষা! অধ্যক্ষের ছেলে ও দাতা সদস্যের ছেলের স্ত্রী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ নিজাম উদ্দিন আকন ও সভাপতি গুলিশাখালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী দলের সভাপতি মোঃ জিয়াদুল করিম অনিয়মের মাধ্যমে ক্লার্ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁনকে অবহিত না করেই পুলিশ মোতায়েন করে লাল নিশান টানিয়ে পরীক্ষা নেন নিয়োগ বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এতে এলাকায় ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসায় শনিবার সকালে।

জানাগেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর ফাজিল মাদ্রাসায় ক্লার্ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে গত ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই পদে ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। ওই ১১ জন আবেদনকারী মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নিজাম আকনের ছেলে রেদওয়ানুল ইসলাম আবির আকন, দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলে আব্দুর রহমানের স্ত্রী আল্পনা আক্তার রয়েছে। শনিবার ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা পরিচলনার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁনকে অবহিত না করেই অধ্যক্ষ মাদ্রাসা চত্ত¡রে পুলিশ মোতায়েন করে লাল নিশান টানিয়ে দেন। ৩৫ নম্বরের লিখিত ওই পরীক্ষায় ৯ জন অংশ নেয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই নিয়োগ বোর্ড কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের ছেলে আবির আকন, দাতা সদস্যের ছেলের স্ত্রী আল্পনা আক্তার ও আরিফ নামের তিনজনের ভাইভা পরীক্ষা নেয়। অপর পরীক্ষার্থীদের দুই ঘন্টা বসিয়ে রেখে ঘোষনা দেয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে আপনারা যেতে পারেন এমন অভিযোগ পরীক্ষার্থী নাঈম ও সাবিনার। অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে দাতা সদস্য মোঃ আব্বাস মৃধা নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। আরো অভিযোগ রয়েছে দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের স্ত্রী আল্পনাকে নিয়োগ দিতেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ নিজাম উদ্দিন আকন তার ছেলে আবিরকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পরীক্ষার্থী নাঈম ও সাবিনা আক্তার বলেন, সাজানো নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার কি প্রয়োজন ছিল? নিয়োগ কমিটির লোকজন কারসাজি করে আল্পনাকে নিয়োগ দিতে আগেই মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন।

তারা আরো বলেন, এই পরীক্ষায় অধ্যক্ষ মাওলানা নিজাম আকনের ছেলে আবির আকন, দাতা সদস্য আব্বাস মৃধার ছেলের স্ত্রী আল্পনা আক্তারসহ তিন জনের ভাইভা নিয়েছেন। আমাদেরকে দুই ঘন্টা বসিয়ে রেখে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল না দিয়েই সকলকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা লিখিত পরীক্ষার ফলাফল জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ও ডিজির প্রতিনিধি না জানিয়ে বলে দেন পরে জানানো হবে।

মাদ্রাসার দাতা সদস্য মোঃ আব্বাস মৃধা বলেন, পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে আমি মাদ্রাসা অফিস কক্ষে বসা ছিলাম। আমার ছেলের বউ লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছেন। চিঠির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগ পত্র পাঠিয়ে দিবেন। পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে অফিস কক্ষে বসে থাকা যায় কিনা এমর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডের কেউতো আমাকে বসে থাকতে নিষেধ করেনি।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নিজাম আকন বলেন, পরীক্ষায় কোন অনিয়ম হয়নি বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মাদ্রাসার সভাপতি গুলিশাখালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলের সভাপতি মোঃ জিয়াদুল কবির মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ থাকতেই পারে কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় কোন অনিয়ম হয়নি। এরপর অনিয়মের বিষয়ে জানতে তাকে বারবার ফোন ও ওয়াপঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

মাদ্রাসা অধিদপ্তরের নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, আমি নিয়োগ বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দেন। এরপর তাকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তার ওয়াসঅ্যাপে নিয়োগ পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেয়নি।

আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অধ্যক্ষ পুলিশ চাওয়ায় আমি পুলিশ দিয়েছি। কিন্তু লাল নিশান টানাতে হয়েছে কেন? তা আমার জানা নেই।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ওই মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তিনি আরো বলেন, ১৪৪ ধারা জাড়ি ছাড়া লাল নিশান টাননো যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ