মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দু’দিনের সফরে আজ ঢাকা আসছেন। ভারত থেকে আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছবেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি তার দুই দেশ সফরের অংশ। রুটিন সফর হলেও তার এবারের সফরটিকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড লু সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে তার এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকতে পারে। ওয়াশিংটনের কী বার্তা তিনি নিয়ে আসছেন তা জানতে বিভিন্ন মহলে কৌতূহল রয়েছে।
লু’র সফর ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র সফরের মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে লু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা এবং শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য বৈঠক করবেন। লু জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও মানবাধিকারসহ অগ্রাধিকারের ইস্যুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন।
এদিকে লু’র সফরের উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার একজন উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘এই সফরের সবকিছুই উল্লেখযোগ্য।’
ডোনাল্ড লু ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন। এই পদে দায়িত্ব লাভের আগে লু কিরগজি প্রজাতন্ত্রে ২০১৮ থেকে ২০২১ এবং আলবেনিয়াতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। আলবেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগের আগে লু যুক্তরাষ্ট্রের ইবোলা রেসপন্সের ডেপুটি রেসপন্সের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকাতে দায়িত্ব পালন করেন।
ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসাবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজ করছেন। তিনি ভারতে ডেপুটি চিফ অব মিশন (ডিসিএম) (২০১০-২০১৩) ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (২০০৯-২০১০), আজারবাইজানে ডিসিএম (২০০৭-২০০৯) এবং কিরগজিস্তানে ডিসিএম (২০০৩-২০০৬) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি কর্মজীবনের শুরুতে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেসাস দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর, ইউরোপীয়বিষয়ক ব্যুরোর (২০০১-২০০৩), স্টেট সেক্রেটারি কার্যালয়ের অধীনে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোবিষয়ক রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (২০০০-২০০১), ভারতের নয়া দিল্লিতে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯৭-২০০০), ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (১৯৯৬-১৯৯৭), জর্জিয়ার তিবলিসিতে কনসুলার অফিসার (১৯৯৪-৯৬) এবং পাকিস্তানের পেশোয়ারে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯২-১৯৯৪) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৮৮-১৯৯০ সময়কালে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিয়নে পিস কর্পসের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে হাতে খনন করা পানির কূপ পুনরুদ্ধার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষাদান ও লেট্রিন নির্মাণে সহায়তা করেছেন।
লু ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচ থেকে আগত। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তিনি আলবেনিয়ান, রাশিয়ান, জর্জিয়ান, আজারবাইজানি, উর্দু, হিন্দি ও পশ্চিম আফ্রিকার ক্রিয় ভাষা জানেন। তিনি বাইক চালানো, সিনেমা দেখা, ভ্রমণ ও নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আগেই ডোনাল্ড লু’র সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। মন্ত্রী আশা করেন, তার সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তিনি বলেন, মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা হবে।
অপরদিকে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি স্টাডি করছে বাংলাদেশ। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন মূল্যবোধে বিশ্বাস করে।
যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বরাবরই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়ে থাকে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আবারও ফেরত চাওয়া হতে পারে।