রবিবার, ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মার্কিন ভিসানীতি বিধিনিষেধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সরকারের বিবৃতি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট-এর আওতায় তথাকথিত 3C বিধান অনুসারে মার্কিন সরকারের ভিসা নীতি সংক্রান্ত ঘোষণাটির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাটিকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সকল পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করছে। তবে, বাংলাদেশ আশা করে যে এই ভিসা নীতি যথেচ্ছভাবে প্রয়োগের পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে অনুসরণ করা হবে।

ধারাবাহিকভাবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। 2008 সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটি সুস্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের সুযোগ পেয়েছে। এর ফলে দেশের মাথাপিছু দারিদ্র্যের হার 2006 সালের 41.5% থেকে 2022 সালে 18.7%-এ নেমে এসেছে এবং একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্য 25.1% থেকে 5.6%-এ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে উন্নয়নের একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশ 2026 সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। গত চৌদ্দ বছরে টানা তিন মেয়াদে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতার কারনেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী কোনো সরকার টিকে থাকার নজির বাংলাদেশে নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার পবিত্র রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে এবং এ অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলটির কঠোর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। বর্তমান সরকার শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আওতায় সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সাথে পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্তির মতো অসংগতি দূর করার লক্ষ্যে ছবি সম্বলিত ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার প্রচলন করা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন, বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সক্ষমতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুমোদিত হয়েছে। এ আইন অনুসারে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, 1972 অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পরিচালনার সুবিধার্থে সামগ্রিক নির্বাহী যন্ত্র তার নির্দেশনার আওতাধীন থাকবে।

সে অনুযায়ী, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর যে কোনো অবৈধ প্রচেষ্টা বা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামগ্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির আওতায় রাখা হবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও অংশগ্রহণ থাকবে। সরকার আশা করে যে জাতীয় পর্যায়ে যেসব অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের আশ্রয় নেয় তারা সতর্ক থাকবে এবং সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে । কঠিন ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অর্জনকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের উপরেই বর্তায়। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় সমর্থনকে বাংলাদেশ সরকার সর্বদাই ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ