এর আগে ইউনূসের ডাকা বৈঠকেও ‘শহিদের তালিকা’ নিয়ে বিএনপি এবং ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-র মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বার এল ভোট নিয়ে।
মুখে ঐক্য রক্ষার কথা বলা হলেও শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিশেষত, জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপির সঙ্গে হাসিনা জমানায় নিষিদ্ধ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-র সংঘাত কার্যত প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।
দ্রুত জাতীয় সংসদের নির্বাচন চেয়ে বিএনপি ক্রমশ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। অন্য দিকে, জামায়াতে নেতৃত্ব চাইছেন এ ক্ষেত্রে ইউনূসকে ‘প্রয়োজনীয় সময়’ দিতে।
খালেদার পুত্র তথা দলে কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতি বার দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, ‘‘নির্বাচনী ব্যবস্থা যদি ঠিক করতে না পারি, তবে দেশের কোনও কিছুরই সমাধান হবে না। ঝড়, তুফান, বন্যা, খরা, বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমরা তাঁদের প্রতিহত করব।’’
জামায়াতের আমির (প্রধান) শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবারই সম্পূর্ণ বিপরীত মত দিয়েছেন। দলের সভায় তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের আয়োজন করুক, আমরা চাই না। আমরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেব। অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলি সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আমরা আশা করছি।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের জামাত, আলোচনায় জাতীয় সংসদের ভোট
প্রসঙ্গত, এর আগে ইউনূসের ডাকা বৈঠকেও দু’দলের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। বিএনপি ওই বৈঠকে দাবি করেছিল, গত জুলাই-অগস্টের ‘গণঅভ্যুত্থানের’ পাশাপাশি হাসিনার শেষ ১৬ বছরে তাদের যত নেতা-কর্মী খুন বা গুম হয়েছেন, সকলের নাম শহিদের তালিকায় তুলতে হবে। বিএনপি সরকার-বিরোধী যে সব আন্দোলন করেছে, সেগুলির উল্লেখও হাসিনা-উচ্ছেদের সময়পঞ্জিতে রাখতে হবে।
অন্য দিকে, জামায়াতে দাবি করে, একাত্তরে গণহত্যার দায়ে তাদের যে সব নেতাকে আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে, তাঁদের নামও জুলাই-শহিদের তালিকায় নিতে হবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি সেই দাবি মানতে রাজি হয়নি।