শনিবার গোলাপবাগের বহুল আলোচিত সমাবেশে ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা। তাদের মধ্যে পাঁচজন সশরীরে উপস্থিত থাকায় তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাকি দু’জনের পদত্যাগপত্র যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন তিনি। বিএনপি’র এমপিদের মধ্যে বগুড়া-৭ আসনের জিএম সিরাজ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ এর জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা রয়েছেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার ‘অসুস্থতার’ কারণে এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ এর হারুনর রশীদ বিদেশে থাকায় সংসদ ভবনে উপস্থিত না হলেও তাদের স্বাক্ষর সংবলিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের হাতে দেন দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা।
সদস্যদের আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৭ (২)-এ বলা হয়েছে- কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন, এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে। সংসদ থেকে বেরিয়ে জিএম সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পাঁচজন আলাদাভাবে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা আর সংসদ সদস্য নেই। স্পিকার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। বাকি বিষয়ে উনি জানাবেন। আমাদের বাকি দু’জন আসতে পারেননি।
উনারা ২০ তারিখের পরে সশরীরে এসে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যাবেন। সংসদ থেকে বিএনপি’র পদত্যাগ আন্দোলনে কতোটুকু গতি আনবে জানতে চাইলে জিএম সিরাজ বলেন, অবশ্যই গতি আনবে। আজকের সংসদ শতভাগ অবৈধ। যে ক’জন আমরা নির্বাচিত ছিলাম, তারা আর সংসদে নেই। যারা এখন সংসদে রয়েছেন তারা প্রত্যেকে অনির্বাচিত।
এখন সংসদে আছে সরকার ও তার পোষা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সেখানে সংসদ আর বহাল থাকতে পারে না। সেই জায়গা থেকে বলতে চাই, এটা আমাদের কঠিন এবং বিশাল বিজয়। পদত্যাগকারী এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা সংসদে ছিলাম, আশা করেছিলাম সরকারের বোধোদয় হবে। কিন্তু সেটা হয়নি, বরং সংকট বেড়েছে। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু কি দেখেছি…নির্বিচারে গুলি করেছে তাদের ওপর। আমাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ই ডিসেম্বর নয়াপল্টন পার্টি অফিসে সাধারণ কর্মী মকবুলকে কীভাবে পুলিশ হত্যা করলো তা সাধারণ মানুষ জানতে চায়।
আমাদের মহাসচিবকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দেয়নি। ফলে গণতন্ত্র যেখানে নেই, আমরা সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলাম। রুমিন ফারহানা পদত্যাগপত্র থেকে পড়ে শুনিয়ে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর দমনপীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ, সর্বোপরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী এই সংসদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত ঘোষণা করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর, অদ্য ১০/১২/২০২২ তারিখে সংসদের যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিএনপি’র প্রতীকে নির্বাচিত গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, তারা তো গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আজকে আমরা পদত্যাগ করেছি। তাদের পদত্যাগের বিষয়টি তারা বলতে পারবেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পরে সাংবাদিকদের বলেন, তারা আমার কাছে সাত জনের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাঁচ জন সশরীরে ছিলেন, তাদেরটা গ্রহণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৬৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ওই আসনগুলো শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দু’জনের আবেদন যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবো। এর মধ্যে সংসদ সচিবালয় সাত্তার সাহেবের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখবেন এবং কথা বলবেন। সব ঠিক থাকলে তা গৃহীত হবে। তবে ই-মেইলে দেয়ায় হারুনের আবেদন গ্রহণ হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে। পরবর্তী করণীয় জানিয়ে স্পিকার বলেন, আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। আসন শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে আসন শূন্যের বিষয়ে এখন গেজেট হবে, পরে সংসদ অধিবেশন যখন বসবে, সেখানেও জানানো হবে।
গেজেটের ৯০ দিনের মধ্যেই উপনির্বাচন: বিএনপি’র পদত্যাগ করা সাত সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়ের গেজেট হাতে পেলেই উপনির্বাচনের পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। রোববার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, সংসদ সচিবালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার পরেই ইসি’র কাজ শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পদত্যাগের নির্দেশ গেজেট নোটিফিকেশন হবে না ততদিন পর্যন্ত ইসি’র কোনো করণীয় নেই।
উপনির্বাচন হলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, এ বিষয়টি সামনে আনলে এই কমিশনার বলেন, এটা তো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আসন শূন্য হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে করতেই হবে। নব্বই দিন তো আর যাবে না। গেজেট পাওয়ার পর দেখা যাবে যে, দুই মাস লাগতে পারে, দেড় মাসও লাগতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে ভালো। প্রথমে অভিযোগ আসে ভোটে কারচুপি হয়েছে। যেহেতু ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই, অতএব এই অভিযোগ করার সুযোগ নেই। যিনি ভোট পাবেন, তিনি জিতবেন।