দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠন করা ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিলে অংশগ্রহণকারী ৪৯টি তফসিলি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অংশগ্রহণ চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ স্বাক্ষর করেন।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গভর্নর উল্লেখ করেছেন যে, কোভিড-১৯ বা করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করার প্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি এ খাতের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সাথে সঙ্গতি রেখে চলতি অর্থবছরের ২য় ষান্মাসিকের বিচক্ষণ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাশাপাশি কৃষক, নারী উদ্যোক্তা, কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন, ব্যাংকগুলোকে নীতি সহায়তা প্রদান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় অধিক সংখ্যক মানুষকে জাতীয় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ এবং সমাজের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর কাজ করে চলেছে।
গভর্নর বলেন, নতুনভাবে গঠিত আজকের ১০ হাজার কোটি টাকার প্রাক-অর্থায়ন তহবিলটিও দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ইএফপিএফ-এর অর্থায়ন কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, এ তহবিল থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কাঁচামাল ক্রয় বা আমদানির বিপরীতে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যার মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। ব্যাংক পর্যায়ে সুদহার হবে ১.৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো ফান্ড গঠন করা হবে না। এছাড়া, ইডিএফ ফান্ড থেকে প্রদানকৃত অর্থ সমন্বয় করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে। ইতোমধ্যে ইডিএফ-এ ১ বিলিয়ন ডলার সমন্বয় হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি নতুন এই তহবিলের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি নির্বাহী পরিচালক নূরুন নাহার উক্ত তহবিল সম্পর্কে ধারণা সম্বলিত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
এছাড়া, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও জনাব সেলিম আর এফ হোসেন তহবিলটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম, একই বিভাগের ইএফপিএফআইএম ইউনিটের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ভূঁইয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।