নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনারের ব্যাটিং নৈপুন্যে ঢাকা টেস্টে জয় বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ কিকেট দল। ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট জিততে চতুর্থ দিন নিউজিল্যান্ডকে ১৩৭ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। জবাব দিতে নামা নিউজিল্যান্ডের ৬৯ রানে ৬ উইকেট শিকার করে জয়ের পথ তৈরি করে ফেলে বাংলাদেশের বোলাররা। ঐসময় শেষ ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৮ রানের দরকার পড়ে নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু সপ্তম উইকেটে ৭৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান তুলে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নকে চুরমার করে দেন ফিলিপস-স্যান্টনার জুটি। ৬ উইকেটে ১৩৯ রান করে জয় তুলে নেয় কিউইরা। ৪ উইকেটের জয়ে বাংলাদেশের সাথে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে নিউজিল্যান্ড। সিলেটে প্রথম টেস্ট ১৫০ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য ঢাকা টেস্টে হার এড়ানোই মূল লক্ষ্য ছিলো টাইগারদের।
আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে নিজেদের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে নামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। ২ ম্যাচ শেষে ১টি করে জয় ও হারে সমান ১২ করে পয়েন্ট আছে দু’দলের। তবে শতকরা হিসেবে নিউজিল্যান্ড টেবিলের তৃতীয় ও বাংলাদেশ আছে চতুর্থস্থানে। প্রথম দু’টিস্থানে আছে যথাক্রমে- পাকিস্তান ও ভারত।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩৮ রান। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৩০ রানে এগিয়ে ছিলো টাইগাররা। জাকির ১৬ ও মোমিনুল শূণ্য হাতে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
চতুর্থ দিনের প্রথম ৪১ বল ভালোভাবে কাটিয়ে দিয়েছিলেন জাকির ও মোমিনুল। পরের ডেলিভারিতে আজাজ প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর আউট হন মোমিনুল। রিভিউর সুযোগ থাকলেও সেটি ব্যবহার করেননি ২টি চারে ১০ রান করা মোমিনুল।
দলীয় ৭১ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে মোমিনুল ফেরার পর যাওয়া আসার মিছিল শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্যাটের-মিচেল স্যান্টনারের তোপে ৯৭ রানে পৌঁছাতেই সপ্তম উইকেট হারায় টাইগাররা।
স্যান্টনারের বলে স্লিপে মিচেলকে ক্যাচ দেন ৯ রান করা মুশফিকুর রহিম। চার মেরে রানের খাতা খুললেও সেখানেই থেমে যান স্যান্টনারের বলে লেগ বিফোর আউট হওয়া শাহাদাত।
স্যান্টনারের পর বাংলাদেশের বিপদ বাড়ান প্যাটেল। ২৪তম ওভারের প্রথম বলে মিড অফে স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে প্যাটেলের শিকার হয়ে ৩ রানে থামেন মিরাজ। একই ওভারের চতুর্থ বলে বাংলাদেশ উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানকে লেগ বিফোর আউট করেন খালি হাতে বিদায় দেন প্যাটেল।
নয় নম্বরে নামা নাইম হাসানকে নিয়ে বাংলাদেশের রান ১শ পার করেন জাকির। এরপর স্যান্টনারের বলে স্লিপে সাউদিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৯ রান করা নাইম।
নাইম ফেরার পর টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন জাকির। হাফ-সেঞ্চুরির পর প্যাটেলের কাছে সমর্পন করেন জাকির। সুইপ করতে গিয়ে মিচেলকে ক্যাচ দেন তিনি। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে লড়াকু ৫৯ রান করেন জাকির। এর মাধ্যমে চতুর্থবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন প্যাটেল।
জাকির ফেরার পর শেষ উইকেটে ১৬ রান যোগ করেন তাইজুল ও শরিফুল। শেষ ব্যাটার হিসেবে শরিফুলকে শিকার করে বাংলাদেশকে ১৪৪ রানে অলআউট করেন প্যাটেল। শরিফুল ৮ রানে থামলেও, ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল।
নিউজিল্যান্ডের প্যাটেল ৫৭ রানে ৬ উইকেট নেন। স্যান্টনার ৩টি ও সাউদি ১টি উইকেট নেন।
১৩৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে পঞ্চম ওভারে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন পেসার শরিফুল। ডেভন কনওয়েকে ২ রানে লেগ বিফোর আউট করেন শরিফুল।
আরেক ওপেনার টম লাথামকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন কেন উইলিয়ামসন। বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। তাইজুলের বলে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন উইলিয়ামসন। তখন ক্রিজের বাইরে থাকায় ব্যক্তিগত ১১ রানে স্টাম্পড আউট হন উইলিয়ামসন। চলতি সিরিজে এই নিয়ে তৃতীয়বার তাইজুলের শিকার হলেন উইলিয়ামসন।
২৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন মিরাজ-তাইজুল। একবার জীবন পেয়ে ৩ রান করা হেনরি নিকোলসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি।
৫০এর বেশি বল খেলে উইকেটে সেট হয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন লাথাম। মিরাজের বলে বিদায় ঘন্টা বাজে লাথামের। প্রথম স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ৬০ বলে ২৬ রান করা লাথাম।
লাথাম ফেরার পরই তাইজুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে আউট হন টম ব্লান্ডেল। ৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরাতে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল ও প্রথম ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করা গ্লেন ফিলিপস।
২৩তম ওভারে মিরাজের বলে স্লিপে ফিলিপসের ক্যাচ ফেলেন শান্ত। সেই মিরাজের বলে স্লিপে মিচেলের ক্যাচ নিতে ভুল করেননি শান্ত। এজন্য রিভিউ নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ২টি চারে ১৯ রান করেন মিচেল।
দলীয় ৬৯ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মিচেলের বিদায়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু সপ্তম উইকেটে ৭৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন ফিলিপস ও স্যান্টনার।
ব্যক্তিগত ১৯ রানে মিরাজের বলে লেগ বিফোর আউট হয়েছিলেন স্যান্টনার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। জীবন পেয়ে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৯ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন স্যান্টনার। ৪৮ বল মোকাবেলা করে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করেন ফিলিপস। বাংলাদেশের মিরাজ ৫১ রানে ৩টি, তাইজুল ৫৮ রানে ২টি ও শরিফুল ৯ রানে ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন নিউজিল্যান্ডের ফিলিপস এবং সিরিজ সেরা হন বাংলাদেশের তাইজুল।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১৭২ ও নিউজিল্যান্ডের ১৮০ রান।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৭২/১০, ৬৬.২ ওভার (মুশফিক ৩৫, শাহাদাত ৩১, ফিলিপস ৩/৩১)
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ১৮০/১০, ৩৭.১ (ফিলিপস ৮৭, মিরাজ ৩/৫৩)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৩৮/২, ৮ ওভার, জাকির ১৬, মোমিনুল ০)
জাকির ক মিচেল ব প্যাটের ৫৯
জয় ক মিচেল ব প্যাটেল ২
শান্ত ক উইলিয়ামসন ব সাউদি ১৫
মোমিনুল এলবিডব্লু ব প্যাটেল ১০
মুশফিকুর ক মিচেল ব স্যান্টনার ৯
শাহাদাত এলবিডব্লু ব স্যান্টনার ৪
মিরাজ ক স্যান্টনার ব প্যাটেল ৩
নুরুল এলবিডব্লু ব প্যাটেল ০
নাইম ক সাউদি ব স্যান্টনার ৯
তাইজুল অপরাজিত ১৪
শরিফুল স্টাম্প ব্লান্ডেল ব প্যাটেল ৮
অতিরিক্ত (বা-১০, লে বা-১) ১১
মোট (অলআউট, ৩৫ ওভার) ১৪৪
উইকেট পতন : ১-৩ (জয়), ২-৩৮ (শান্ত), ৩-৭১ (মোমিনুল), ৪-৮২ (মুশফিকুর) ৫-৮৮ (শাহাদাত), ৬-৯৭ (মিরাজ), ৭-৯৭ (নুরুল), ৮-১১২ (নাইম), ৯-১২৮ (জাকির), ১০-১৪৪ (শরিফুল)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
প্যাটেল : ১৮-১-৫৭-৬,
স্যান্টনার : ১১-০-৫১-৩,
সাউদি : ৬-১-২৫-১।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস :
লাথাম ক শান্ত ব মিরাজ ২৬
কনওয়ে এলবিডব্লু ব শরিফুল ২
উইলিয়ামসন স্টাম্প নুরুল ব তাইজুল ১১
নিকোলস এলবিডব্লু ব মিরাজ ৩
মিচেল ক শান্ত ব মিরাজ ১৯
ব্লান্ডেল ক নুরুল ব তাইজুল ২
ফিলিপস অপরাজিত ৪০
স্যান্টনার অপরাজিত ৩৫
অতিরিক্ত (বা-১) ১
মোট (৬ উইকেট, ৩৯.৪ ওভার) ১৩৯
উইকেট পতন : ১-৫ (কনওয়ে), ২-২৪ (উইলিয়ামসন), ৩-৩৩ (নিকোলস), ৪-৪৮ (লাথাম), ৫-৫১ (ব্লান্ডেল), ৬-৬৯ (মিচেল)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৫-২-৯-১,
মিরাজ : ১৬.৪-২-৫২-৩,
তাইজুল: ১৪-২-৫৮-২,
নাইম: ৩-০-১৫-০,
মোমিনুল: ১-০-৪-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: গ্লেন ফিলিপস(নিউজিল্যান্ড)
সিরিজ সেরা: তাইজুল ইসলাম(বাংলাদেশ)
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ।