শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশে সফলভাবে সম্পন্ন হলো ট্রান্স-জুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটো-সিস্টেমিক শান্ট (টিপস)

গত ৪ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নেতৃত্বে একদল ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজিষ্ট সফলভাবে একজন লিভার সিরোসিস রোগীর ট্রান্স-জুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটো-সিস্টেমিক শান্ট (টিপস) সম্পাদন করেছেন। এই নিয়ে এই টিম দেশে দ্বিতীয়বারের মত সফলভাবে টিপস করলেন। গতকাল যে রোগীকে টিপস করা হয়, তিনি দীর্ঘ্যদিন যাবৎ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। লিভার সিরোসিসের কারনে তার ঘন ঘন পেটে পানি আসছিল যা প্রচলিত কোন চিকিৎসাতেই কমানো যাচ্ছিল না। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় রিফর্যাক্টরী এ্যাসাইটিস। পাশাপাশি রোগীর গলায় শিরা ছিড়ে গিয়ে কয়েকদফা রক্ত বমি বা ভ্যারিসিয়াল ব্লিডিংও হয়েছিল। ইতিপূর্বে গত ডিসেম্বরে একই টিম একজন বাড চিয়ারী সিনড্রমে আক্রান্ত রোগীর উপর প্রথমবারেরমত সফলভাবে টিপস সম্পাদন করেন। এক মাসের ব্যবধানে সেই রোগীর সন্তোষজনক উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে নিয়মিতভাবে তারা টিপস করবেন বলে জানান অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় বাইশ হাজার মানুষ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন, যাদের অধিকাংশই পেটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পানি চলে আসা কিংবা বারবার রক্ত বমির কারনে খারাপ হয়ে যান। এ ধরনের রোগীদের জন্য অত্যান্ত কার্যকর চিকিৎসাটি হচ্ছে টিপস যা ক্যাথল্যাবে করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যান্ত দুরূহ বলে পৃথিবীতে খুব কম দেশেই হাতে গোনা কিছু সেন্টারে টিপস করা হয়। প্রতিবেশি ভারতেও টিপস করার মত সেন্টারের সংখ্যা হাতে গোনাই। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে টিপস করার কোন সুযোগ ছিল না। অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল ও তার টিমের সদ্যসরা এদেশে স্থানীয়ভাবে প্রথমবারেরমত টিপস শুরু করলেন।

ইতিপূর্বেও অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল ও তার ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের টিমের সদস্যরা বাংলাদেশে লিভার

চিকিৎসায় নানান অত্যাধুনিক ইন্টারভেনশন প্রথমবারেরমত শুরু করেছেন। তাদের হাত দিয়েই লিভার সিরোসিস রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্রথমবারেরমত অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন বা স্টেম সেল থেরাপীর সূচনা হয়। এ পর্যন্ত পাচ শতাধিক লিভার সিরোসিস রোগী এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহন করে উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি তারা লিভার ফেইলিওরের চিকিৎসায় নিয়মিতভাবে প্লাজমা এক্সচেঞ্জ এবং লিভার ডায়ালাইসিস বা হেইমোফিলট্রেশন করছেন এবং শতাধিক রোগী এ সব চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। লিভার ক্যান্সারের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ট্রান্স আর্টারিয়াল কেমো এম্বোলাইজেশন (টেইস)-এর সূচনাও তাদের হাতে এবং প্রায় পাচশ লিভার ক্যান্সার রোগীকে সফলভাবে টেইস করায় তাদের কাছাকাছি অভিজ্ঞতা এই অঞ্চলে খুব কম সেন্টারেরই আছে।

বেসরকারী খাতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনে এই সকল চিকিৎসা সফলভাবে, নিয়মিত করা হচ্ছে এবং এর ফলে সাধারন মানুষও দেশে বসে, সুলভে এ ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা গ্রহন করে সুস্থ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও এ ধরনের চিকিৎসা সুবিধা উপলব্ধ করার জন্য অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল এবং তার টিমের সদস্যরা কাজ করছেন। এরই মধ্যে সিলেট, রাজশাহী ও কুমিল্লায় সফলভাবে টেইস, স্টেম সেল থেরাপী ও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করা সম্ভবও হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীলের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রহিম ও ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম ডিউ এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. দুলাল চন্দ্র দাস, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, গাজিপুরের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ আশরাফুল আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের

লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়েজ আহমেদ খন্দকার ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকসানা বেগম, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবিন, শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্টোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. আতিকুল ইসলাম এবং শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারীর এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইকরামুল হক সজল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ