করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এ অবস্থায় বহুবিধ সংকটে পড়া বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে গত সোমবার ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), যার প্রথম কিস্তি দ্রুতই পাওয়া যাবে।
এ নিয়ে আইএমএফ যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সূচক আকারে তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৭.২ শতাংশ। আর পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৫.৫ শতাংশ। ২০২৪ অর্থবছরে আবার বেড়ে হবে ৬.৫ শতাংশ এবং ২০২৫ অর্থবছরে আরো বেড়ে হবে ৭.১ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমলেও পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে বাড়বে এবং ক্রমান্বয়ে বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এতে আরো দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ভোগ দাঁড়াবে জিডিপির ৭.৬ শতাংশ, সরকারি খাতে মাইনাস ৭.৫ শতাংশ। গ্রোজ ক্যাপিটাল ফরমেশন বা মোট মূলধন গঠন দাঁড়াবে জিডিপির মাইনাস ৬.২ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে মাইনাস ১১.৭ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ১১.০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোক্তা মূল্যসূচক দাঁড়াবে ৮.১ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও থাকবে ঋণাত্মক।
বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়ল
এদিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুখবর দিয়েছে আইএমএফ। গত বছর বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থাই বলেছিল, ২০২৩ সালে উন্নত দেশগুলোতে মন্দা হবে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হারও অনেকটা কমবে। তবে শেষমেশ সেই আশঙ্কা নাকচ করে গত এক বছরের মধ্যে এই প্রথম বৈশ্বিক পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে সংস্থাটি।
গত সোমবার প্রকাশিত আইএমএফের জানুয়ারি মাসের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের হালানাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২.৯ শতাংশ। এর আগে গত অক্টোবর মাসে তাদের পূর্বাভাসের চেয়ে এটা শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০২২ সালের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির চেয়ে তা কম। ২০২২ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৪ শতাংশ। তবে আইএমএফ বলছে, চলতি বছর প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছবে এবং এরপর তা আবার বাড়তে থাকবে। ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.১ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে আইএমএফ। তারা বলেছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার কমে ৬.৬ শতাংশ হতে পারে, ২০২২ সালে যা ছিল ৮.৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা আরো কমে হতে পারে ৪.৩ শতাংশ।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে আইএমএফ। তারা বলেছে, মানুষের পুঞ্জীভূত চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, শ্রমবাজারও উন্মুক্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে কমতে পারে। সেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যেই তা ঘটবে। ফলে নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমে আসবে এবং তাতে সমাজে অর্থের প্রবাহ বাড়বে।
ঝুঁকির প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের চাপ বেড়ে যেতে পারে। তা হলে প্রবৃদ্ধিতে চাপ পড়তে পারে