আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সোমবার বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
আজ মঙ্গলবার এখানে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর আওতায় প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) এর আওতায় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে।
আইএমএফ-এর ইসিএফ/ইএফএফ অনুমোদনের ফলে ৪২ মাসের মধ্যে নির্ধারিত সাতটি কিস্তির মধ্যে প্রথম হিসাবে প্রায় ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ ছয়টি সমান কিস্তিতে দেয়া হবে, প্রতিটি কিস্তি হবে ৭০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৪২ মাসের এই কর্মসূচি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, দুর্বলদের সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবুজ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে।
সংস্কারগুলো বৃহত্তর সামাজিক ও উন্নয়নমূলক ব্যয় সক্ষম করার জন্য বাজেট সক্ষমতা তৈরি করবে, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করণ, নীতি কাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং জলবায়ু স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করবে।
আইএমএফ বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে মহামারী থেকে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, কর্তৃপক্ষ এই সর্বশেষ অর্থনৈতিক বিঘ্ন মোকাবেলার জন্য একটি বিস্তৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে যে এই তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার পাশাপাশি, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং জলবায়ু স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যা এবং দুর্বলতাগুলোও মোকাবেলা করতে হবে।
ইসিএফ/ইএফএফ ব্যবস্থার অধীনে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপনের সময় দুর্বলদের সুরক্ষায় সহায়তা করবে। সমসাময়িক আরএসএফ ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় চিহ্নিত জলবায়ু বিনিয়োগের অগ্রাধিকারগুলোর অর্থায়নের জন্য আর্থিক স্থান প্রসারিত করতে, অতিরিক্ত অর্থায়নকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে ইসিএফ/ইএফএফের অধীনে সংস্থানগুলো পূর্ণ সহায়তা করবে।
আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) আন্তোয়েনেট মনসেউ সায়েহ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ধারাবাহিক অগ্রগতি করেছে। কোভিড-১৯ মহামারী এবং পরবর্তী ইউক্রেনে রাশিয়ান যুদ্ধ এই দীর্ঘ সময়ের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ব্যাহত করেছে। একাধিক ধাক্কা বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী বৈরিতার ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সময়, কর্তৃপক্ষকে আরও স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তাদের উচ্চাভিলাষী সংস্কার এজেন্ডাকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর আকাক্সক্ষা অর্জন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে মানবসম্পদ ও অবকাঠামো খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ এই চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করে যা অর্থনীতিকে বড় ঝুঁকির মুখে ফেলে, এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ইসিএফ/ইএফএফ ব্যবস্থা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে এবং কর্তৃপক্ষের সংস্কার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, কর নীতি এবং রাজস্ব প্রশাসন উভয় সংস্কারের উপর নির্ভরশীল অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ কৌশল বাস্তবায়নের ফলে সামাজিক, উন্নয়ন এবং জলবায়ু ব্যয় টেকসইভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকারি অর্থ, বিনিয়োগ এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য আর্থিক সংস্কার ব্যয় দক্ষতা, প্রশাসন এবং স্বচ্ছতা উন্নত করবে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা কমানো, তদারকি জোরদার করা, সুশাসন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে অর্থায়নকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।
তিনি উল্লেখ করেন , প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়াতে ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি, বাণিজ্য ও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে কাঠামোগত সংস্কার, আর্থিক খাতকে জোরদার করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘অ্যাকসেস টু আরএসএফ’ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও প্রশমন প্রচেষ্টায় অর্থায়ন করবে। আরএসএফ সংস্কারগুলো জলবায়ু বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্নত করে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে এবং স্থিতিশীলতা তৈরি এবং অতিরিক্ত সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জলবায়ুু-ব্যয় দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ইসিএফ/ইএফএফের অধীনে সংস্কার পূর্ণ হবে।