স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বসবাসযোগ্য ঢাকা নগরী গড়তে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সেসব উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নও দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তির ফলে পরিবেশ দূষণ সহ দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে আমাদের সময় লাগছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসম্ভবকে সম্ভব করে যেভাবে দারিদ্র্যসীমা হ্রাস করেছে, খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এলডিসি উত্তীর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে সেভাবে পরিবেশ দূষণ রোধে শৃঙ্খলাও একদিন আমরা অর্জন করব।
শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজনে এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহযোগিতায় “২৮ বছরে রাজধানীর জলাধর ও সবুজ নিধনঃ বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, মানুষই পরিবেশের দূষণ করে এবং মানুষই পারে দূষণ প্রতিরোধ করতে। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছরে যা অর্জন হয়েছে তা অন্য কোন সরকারের সময় হয়নি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এমডিজি অর্জন করেছি, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করছি, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা মহাপরিকল্পনাও শেখ হাসিনা নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু বর্তমানের কথা চিন্তা করেননি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।
মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রার যেরকম এপিঠ-ওপিঠ উভয় দিকই রয়েছে তেমনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ইতিবাচক দিকের সাথে সাথে নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। সেই নেতিবাচক প্রভাবকে কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নানা ধরনের প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশটা আমাদের সবার এবং এদেশের উন্নতির জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
ঢাকা শহরের সবুজ ভূমি ও জলাভূমি রক্ষায় এই মহানগরীতে কত মানুষ বসবাস করবে তারও একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষের চাপে যেকোনো ভালো পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। সীমার অতিরিক্ত মানুষ ঢাকায় বসবাস করাকে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালাও নেওয়ার সময় হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
সরকার সিভিল সোসাইটির সমালোচনা ও যেকোনো আন্দোলনকে সাধুবাদ জানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের দেশে রয়েছে। বৃক্ষ নিধন, জলাশয় দখল ও নদীর দূষণের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে সব সময় সোচ্চার জানিয়ে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবুজ ভূমি এবং জলাভূমিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ খাঁচার মতো অবকাঠামোয় মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না ।
গোল টেবিল বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি তার বক্তব্যে সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন উল্লেখ করে সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সবুজ ভূমি ও জলাভূমি দখলমুক্ত রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ঢাকা মহানগরের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং রাজধানী ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া দিঘী ভরাট, হাতিরঝিলের লেক ভরাট এবং গাবতলীতে বিএডিসির জন্য নিম্নভূমি ভরাট এখনই বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি সুলতানা কামাল ঢাকার সবুজ ভূমি ও জলাভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মেজর শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সোসাইটি অব এক্সপার্টস অন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডীন অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগদ উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ আহসান।