শুক্রবার, ১লা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বরগুনা জেলার সংসদীয় তিনটি আসন পুর্নবহাল না করায় জেলার ১২ লাখ মানুষ ক্ষুদ্ধ

বরগুনা জেলার সংসদীয় তিনটি আসন পুর্নবহাল না করায় ক্ষুদ্ধ জেলার ১২ লাখ মানুষ। নির্বাচন কমিশনকে এ সংসদীয় আসন পুর্নবহালের দাবী জানিয়েছেন তারা।

জানাগেছে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকুলীয় বরগুনা জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আয়তন ১৮৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ১২ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩০ জন। বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলাকে পায়রা (বুরিশ্বর) ও বিশখালী নদীতে বিভক্ত করে রেখেছে। পায়রা নদীর পুর্ব পাড়ে আমতলী ও তালতলী উপজেলা। পশ্চিম দিকে বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা। বিশখালী নদীর পশ্চিম দিকে পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল। তৎকালীন সরকার বাহাদুর পায়রা ও বিশখালী নদীর ওপর ভিত্তি করে অবহেলিত বরগুনা জেলাকে তিনটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত করেছেন। বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন, পাথরঘাটা ও বামনা নিয়ে বরগুনা-২ আসন এবং আমতলী ও তালতলী নিয়ে বরগুনা-৩ আসন। সমবন্ঠনের মাধ্যমে চলছিল তিনটি সংসদীয় আসনের উন্নয়ন।

কিন্তু ২০০৮ সালে সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকার সরেজমিনে পরিদর্শন না করেই একটি দলকে সুবিধা দিতে পরিকল্পিতভাবে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে ভেঙ্গে দুইটি সংসদীয় আসনে বিন্যাস্ত করেন। বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন এবং পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলা নিয়ে বরগুনা-২ আসন গঠন করা হয়। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে পরে সর্ব দক্ষিণের উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী উপজেলার চার লাখ মানুষ। বর্তমানে বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাভ ৫৭ হাজার ৮৭৪ এবং বরগুনা-২ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাভ ৭০ হাজার ৫৩০ জন। এর মধ্যে আমতলী ও তালতলীতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ ভোট।

বরগুনা- ১ আসনের (বরগুনা সদর- আমতলী-তালতলী) এ তিনটি উপজেলার মধ্যে প্রমত্তা পায়না নদী প্রবাহমান। যার দৈঘ্য ৯০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৪ কিলোমিটার। বরগুনা-২ আসনের ( পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) এ তিনটি উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান বিষখালী নদী। নদীর কারণে নির্বাচনকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ছয়টি জেলার দুইটি সংসদীয় আসনের ভোট গ্রহনে হিমসীম খেতে হয়। ফলে নির্বাচনের গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন পুর্নবহালের দাবীতে নির্বাচন কমিশনে পাঁচটি আবেদন করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বরগুনা জেলার আসন পুর্নবহালের কোন দিকই আমলে না নিয়ে খসরা তফসিল প্রকাশ করেছেন। এতে বরগুনা জেলার সংসদীয় আসনে কোন পরিবর্তন আনেননি। এতে ক্ষুব্দ হয়েছেন বরগুনা জেলার ১২ লাখ মানুষ। তারা নির্বাচন কমিশনকে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে উন্নীত করনের দাবী জানিয়েছেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডা ইউনিটে নেতৃত্ব দেয়া তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বরগুনা জেলায় তিনটি আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামীলীগকে সুবিধা দিতে বরগুনা জেলা থেকে বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্তি করে দুইটি আসনে করেন। এতে বরগুনার জেলার মানুষ চরমভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। ভেবেছিলাম নির্বাচন কমিশন এ বছর আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন কিন্তু তারাও আমাদের অধিকার নিয়ে খেলা করেছেন।

আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, আশা করেছিলাম নির্বাচন কমিশন বরগুনার জেলার মানুষের অধিকার বঞ্চিতের কথা বিবেচনায় এনে ৩টি সংসদীয় আসন ফিরিয়ে দিবেন কিন্তু তারাও আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমুলক আচরণ করলেন। তিনি আরো বলেন, খসরা তালিকা প্রকাশ করলেও বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন নির্বাচন কমিশন বিবেচনায় নিবেন।

বরগুনা প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি অ্যাড. মোস্তফা কাদের বলেন, বরগুনা জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির বসবাস। এ জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের মুল ধারায় আনতে হলে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন বিন্যাসের প্রয়োজন ছিল। নির্বাচন কমিশনকে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন পুর্নবহালের দাবী জানান তিনি।

আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ তুহিন মৃধা বলেন, ২০০৮ সালে সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকার সরেজমিনে পরিদর্শন না করেই আওয়ামীলীগ দলকে সুবিধা দিতে বরগুনা-৩ আসনকে বিলুপ্ত করে বরগুনা-১ আসনের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশনই একই কাজ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে বরগুনা-৩ আসন ফিরে পাওয়ার দাবী জানান তিনি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট গাজী মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভৌগলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন বরগুনা জেলার সংসদীয় তিনটি আসন পুর্নবহাল করবেন বলে আশা করেছিলাম কিন্তু তারাও আমাদের বঞ্চিত করলেন। নির্বাচন কমিশন খসরা তালিকা প্রকাশ করলেও বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুর্নবহাল করবেন বলে বিশ্বাস করি।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস আমতলী-তালতলী উপজেলার গণ মানুষের নেতা ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, বরগুনা জেলার সংসদীয় তিনটি আসন পুর্নবহাল না করে নির্বাচন কমিশন ১২ লাখ মানুষের অধিকার হরন করেছেন। উপকুলীয় মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়েও নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন পুর্নবহাল করা।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের গ্রেজেটে উল্লেখ আছে ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার বিবেচনায় বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন থেকে বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্তির কোন যুক্তি নেই। কিন্তু তারা সেই গেজেটও আমলে নেয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ