পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রধান প্রবক্তা হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর দোষী সাব্যস্ত খুনিদের ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়া তাদের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, “স্ব-ঘোষিত খুনিরা সেই একই দেশে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা) বসবাস করছে, যারা মানবতাবাদ নিয়ে বক্তৃতা দেয়, মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় দেয়। তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যার স্মরণে শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকার এ পর্যন্ত খুঁজে বের করেছে যে বঙ্গবন্ধুর দুই সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনি- রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরী যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছে। এছাড়া অন্য তিন পলাতক- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম এবং মোসলেহউদ্দিন খানের হদিস সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মোমেন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখনও পলাতক। আমরা দু’জনের কথা জানি — একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেকজন কানাডায়। অন্য তিন পলাতক আসামির অবস্থান এখনো জানা যায়নি।” দুই খুনির অবস্থান জানার পর, এই দুই পলাতক খুনিকে ফিরিয়ে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় মার্কিন ও কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। এর আগে মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ধরতে অভিযানের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশের সব মিশনকে চিঠি দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে অবস্থানরত দেশের বাংলাদেশ মিশনের পাশাপাশি, সেদেশে খুনিদের সন্দেহভাজন অবস্থানেও নজরদারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। নূর চৌধুরী এবং রাশেদ চৌধুরী সম্পর্কে ড. মোমেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের তাদের প্রত্যর্পণের জন্য সরকারী প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে স্বাক্ষর প্রচারণার কর্মসূচি গ্রহণ এবং সেখানকার কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছেন।
১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পলাতক ঘাতকদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যের আলোকে, ঢাকা পলাতক খুনিদের সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার দেশগুলোতে তার মিশনকে সক্রিয় করেছে। মোট ১২ জন চাকুরিচ্যুত সামরিক অফিসারকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পরে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয় জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে এবং একজনের বিদেশে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ছয় ঘাতকের মধ্যে তিনজনকে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের পর, তিনটি দেশ- থাইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।
এর আগে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলি তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, ইন্টারপোল তাদের ট্র্যাক করার জন্য ‘রেড নোটিশ’ জারি করায়, খুনিদের মধ্যে কেউ কেউ এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড চাকুরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ আফ্রিকার একটি দেশে গোপন আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল, আরও কয়েকজন পাকিস্তান, লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্পেন এবং জার্মানিতে লুকিয়ে থাকতে পারে।
সরকার ১৯৭৫ সালের পলাতক খুনিদের ধরতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান, একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি স্পেশাল স্কোয়াড গঠন করেছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন শোকের মাস উপলক্ষে ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে পৃথকভাবে তিনটি চারা রোপণ করেন।