‘রাষ্ট্র সংস্কারঃ প্রেক্ষিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গড়ে ওঠার পেছনে প্রশাসন ক্যাডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার উপর যে গুলি চালানো হয়েছিল, তার নির্দেশদাতা ছিল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। কারন, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলির নির্দেশ দিতে পারে শুধু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাদের নির্দেশেই যে গুলি চালানো হয়েছে তা বিভিন্ন ভিডিও থেকেও প্রমান পাওয়া গেছে। তাই, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
শনিবার ঢাকায় পূর্ত ভবন অডিটোরিয়ামে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারঃ প্রেক্ষিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এ কথা বলেন।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন- সোহরাব হাসান, যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক প্রথম আলো; ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল; জোনায়েদ সাকি, প্রধান সমন্বয়কারী, গণসংহতি আন্দোলন; ড. মোহাম্মদ গোলাম রববানি, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; এম. এ. আজিজ, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট; মাসুদ কামাল, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট; প্রফেসর মোঃ আব্দুস সামাদ, সাবেক সভাপতি, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি; অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ।
বৈঠকে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রববানি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম. এ. আজিজ, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর মোঃ আব্দুস সামাদ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনন্সিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ আহমেদ ইকবাল চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সালেকুর রহমান মাসুম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট আবদুর রহমান (জীবল) এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল হুদা।
এ সময় ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ বৈষম্যহীন, জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে।
উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে- উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ এর বাস্তবায়ন, প্রশাসন ক্যাডারের ও অন্যান্য ক্যাডারের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনয়ন, পদ আপগ্রেডেশন, পদোন্নতিতে সমান সুযোগ প্রদান, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস, বিভিন্ন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ইত্যাদি। এছাড়া দক্ষ সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষা বৃত্তির ক্ষেত্রে সমতা আনয়ন, গাড়ী ঋণ সুবিধার বৈষম্য দূরীকরণসহ অন্যান্য দাবি তুলে ধরা হয়।
বক্তারা বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অথচ, সংবিধানের এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্যাডার সদসস্যদের সাংবিধানিক অধিকার অনৈতিকভাবে হরণ করে চলেছে। মেধাবী সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে সকল ক্যাডারের উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব হিসেবে নিয়োগের বিধান করতে হবে।
তারা আর বলেন, যারা একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদেরকে দমিয়ে রেখে প্রশাসন ক্যাডার মন্ত্রনালয়ের পোস্ট গুলো দখল করে রেখেছে। এতে, অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যরা কাজের অনুপ্রেরনা হারিয়ে ফেলছে। ফলে, রাষ্ট্র ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, প্রত্যেক ক্যাডারের সরবচ্চ পদে নিজ নিজ ক্যাডারের সদস্যদের নিয়োগ করতে হবে।
এছাড়া, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য ড. মোহাম্মদ মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাডার এসোসিয়েশনের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।