শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়! কৃষি উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে

বরগুনার আমতলী উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটার গ্রাসে। কৃষকরা ইটভাটার ঠিকাদারদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছে। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে হুমকিতে আবাদী জমি। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারী অপরাধ। কিন্তু মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার ও ইটভাটার মালিকরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছে। কৃষিবিদদের দাবী দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পরবে।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ঈশা ইকবাল বলেন, কৃষি জমি’র উপরের ৮-১০ ইঞ্চি থেকে দের ফুট পর্যন্ত মাটির উপরিভাগে রাসায়নিক উপাদান থাকে। এ মাটি কেটে নেয়া হলে যেমন জমি উর্বরতা হারাবে, তেমনি ফসল আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পরবে। তিনি আরো বলেন, ফসলি জমিতে গভীর করে মাটি কেটে নিলে ওই জমি অনাবাদি হয়ে যায়। এতে আবাদী জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। সরকারীভাবে নির্দেশনা আছে, ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারী অপরাধ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিলে মাটি কাটার প্রবনতা হ্রাস পেতো।

জানাগেছে,আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২০ টি ইটভাটা রয়েছে। এ ইটভাটা গুলোতে বছরে অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে আনছে। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছে। গত বছর যারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে ওই জমিতে এ বছর আমনের মৌসুমে ভালো ফসল হয়নি।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপণ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩, মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করিতে পারিবে না। যদি কোন ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘণ করিয়া ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহার বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
ইটভাটার মালিকরা এ আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি (কৃষি) থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।

বৃহস্পতিবার আমতলী উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী ও কুকুয়ার আজিমপুর ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রলি বোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।

কালিবাড়ী গ্রামের কৃষক মোতালেব বলেন “ মোগো এলাকায় অনেক মানু হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে, কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমি’র মাডি কাইটা সর্বনাশ করমু না”।

বান্দ্রা গ্রামের বাদল বলেন, অনেকে জমির মাটি বিক্রি করছেন।

ট্রাক্টর চালক মোঃ মুছা বলেন, কৃষি জমির মাটি কেটে বিবিসি ইটভাটায় ট্রাক্টর বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছি। কৃষি জমির মাটি বিক্রিতে জমির উর্ভরতা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু জমির মালিকরা বুঝেও ঠিকাদারের টাকার লোভে পড়ে দেদার মাটি বিক্রি করছেন।

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ভুল করেছি। ওই জমিতে এ বছর ভালো ফসল হয়নি।

রায়বালা গ্রামের এমবিএম ইটভাটার মালিক মাহবুব মৃধা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ টাকা ফুট হিসেবে মাটি ক্রয় করি। তারা ইটভাটায় ট্রাক্টরে করে মাটি দিয়ে যায়। কোথা থেকে ঠিকাদার মাটি সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই?

মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার মোঃ মোজাম্মেল হাওলাদার বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ৪ থেকে সাড়ে চার টাকা ফুট দরে মাটি কিনে ইটভাটিতে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষকরা অপরিত্যাক্ত জমি, দলখেত, পুকুরের মাটি বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলায় ২০ টি ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেক ইটভাটায় একজন করে মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার আছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ফসলি জমির কেটে নেয়া ফসল উৎপাদনের জন্য হুমকি কিন্তু জমির মালিকরা না বুঝে জমির মাটি বিক্রি করছেন। খোজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ