শুক্রবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রিগোজিন প্রতিভাবান ছিলেন, কিন্তু জীবনে বড় ভুল করেছেন : পুতিন

ভাড়াটে যোদ্ধাদের সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবরের পর এ বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাকে বহনকারী জেট বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের ২৪ ঘণ্টা পর এ নিয়ে কথা বললেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ভাড়াটে যোদ্ধাদের সংগঠনটির প্রধান একজন ‘প্রতিভাবান ব্যক্তি’ ছিলেন যিনি ‘জীবনে বড় ধরণের ভুল করেছেন’।

বিমানে যে ১০ ব্যক্তি ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে তাদের সবার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মি. পুতিন। বুধবার সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। মি. পুতিন স্পষ্টভাবে প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই এ নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা শুরু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিমানটি কিভাবে বিধ্বস্ত হলো, যাত্রী তালিকা অনুযায়ী প্রিগোজিন আসলেই বিমানটিতে ছিলেন কি না ইত্যাদি।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে ওয়াগনার প্রধান সম্ভবত বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

বিমানটি টিভের এলাকার যে স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন যে, বিমানটি বিধ্বস্ত হতে দেখার আগে তারা একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

রাশিয়ার বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অনেক তত্ত্বের মধ্যে একটি তত্ত্বের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে, বিমানটিতে কোনো বোমা রাখা হয়েছিল কি না।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজকে বলেন, সবচেয়ে জোরালো কারণ হতে পারে যে, বিমানে হয়তো একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।

‘কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে তা অজানা হলেও বোমা হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে,’ বলেন তিনি।

প্রিগোজিনের সাথে সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলে অবশ্য আরেকটি সম্ভাবনার বিষয়ে বলা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে, রাশিয়ার বিমান-বিধ্বংসী বাহিনী গুলি করে জেট বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে। এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং বৃহস্পতিবার পেন্টাগন বলেছে যে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দর যেখান থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার জন্য বিমানটি উড্ডয়ন করেছিল। সেখানকার গ্রাউন্ড স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজগুলো খুঁজে দেখা হচ্ছে।

প্রিগোজিন ছিলেন রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদের সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান। তিনি এক সময় পুতিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

কিন্তু গত জুনে রাশিয়ায় একটি সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের পর অনেক পর্যবেক্ষক তাকে ‘ডেড ম্যান ওয়াকিং’ বা ‘হেঁটে বেড়ানো মৃত ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিমান বিধ্বস্তের পর ক্রেমলিন পুরোপুরি নীরব ভূমিকা পালন করেছে। পরের দিন সকালে প্রেসিডেন্ট পুতিন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া ব্রিকস সম্মেলনে বক্তব্যও রেখেছেন। কিন্তু তিনি বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কোন কথা বলেননি, যদিও পুরো বিশ্বে এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছিল।

প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবরের পর মস্কোতে তার স্মরণে মোমবাতি ও ফুল দিয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি বৈঠক করছিলেন, যেটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। তখন মি. পুতিন বলেন, “আমি নিহত সবার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তথ্য বলছে যে বিমানটিতে ‘ওয়াগনারের কর্মীরা’ ছিলেন।

“এই সব মানুষ ইউক্রেনে নব্য-নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যে পরিচালিত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে,” মি. পুতিন বলেন। তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বলেন যে, তারা নাৎসিবাদের সাথে যুক্ত।

গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর বিষয়টিকে বৈধতা দিতে তিনি এই অভিযোগ ব্যবহার করেছেন।

মি. পুতিন বলেন, তিনি প্রিগোজিনকে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে জানতেন এবং তাকে ‘জটিল জীবন অতিবাহিত করা একজন ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন।

রাশিয়ার এই নেতা প্রিগোজিন ও তার যোদ্ধাদের বিশেষ করে ইউক্রেনের তাদের ভূমিকার জন্য প্রশংসা করেন।

“তিনি জীবনে মারাত্মক ভুল করেছেন। যেখানে আমাদের এবং তার লক্ষ্য অভিন্ন ছিল, সে কাজ তিনি আমাদের হয়ে করে দিয়েছেন। গত কয়েকমাসেও সেটা অব্যাহত ছিল।”

মি. পুতিন প্রিগোজিনের অতীত নিয়ে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তবে মি. পুতিন ওয়াগনার প্রধানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেননি।

যখন প্রিগোজিন ও তার সশস্ত্র যোদ্ধা বিশেষ করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের নিয়ে দুই মাস আগে বিদ্রোহ শুরু করে তখন মি. পুতিন তাদের এই কর্মকাণ্ডকে “বিশ্বাসঘাতকতা” এবং “পেছন থেকে ছুরিকাঘাত” বলে বর্ণনা করেছিলেন।

এই ঘটনার পর একটি চুক্তি হয়েছিল যার আওতায় ওয়াগনার যোদ্ধাদের হয় রুশ সেনাবাহিনীতে যোগদান অথবা বেলারুশে পালিয়ে যাওয়ার বিকল্প দেয়া হয়েছিল, যাতে তারা শাস্তির মুখে পড়বে না বলে জানানো হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এনিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। রাশিয়ার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করার কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু মি. পুতিন বলছেন যে, ডিএনএ পরীক্ষা করতে সময় লাগবে।

রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াগনারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উৎকিন এবং ওয়াগনারের অর্থায়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ভ্যালেরি চেকালভও এই বিমানটিতে ছিলেন।

বিমানে থাকা সাত আরোহী এবং তিন ক্রু- সবাই নিহত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ