বৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন মির্জা ফখরুল

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে জুলাই ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভা শুরুতে বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) ধন্যবাদ দিতে চাই এই ফোরাম থেকে যে, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করব যে, নির্বাচন কমিশন এই কাজ (নির্বাচনের প্রস্তুতি) খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে তারা একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই ধরনের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারে এবং সেইভাবে যেন তার কাজ করেন।

নির্বাচন হবে কি হবে না রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। এখানে মান্না ভাই (মাহমুদুর রহমান মান্না) জানতে চেয়েছেন নির্বাচন হবে কি হবে না। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেনো? নির্বাচন তো এদেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কারণ মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজ গুলো করে আমরা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। কেনো? নির্বাচন যদি সংসদের না হয় তাহলে দেশে একটা অন্ধকারী শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। অতএব আমাদের সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে নির্বাচন হয়। আমি মনে করি, নির্বাচন একটা হবে, সেই নির্বাচন সবাইকে করতে হবে। যারা মনে করছে যে, এভাবে নির্বাচন করা যাবে না তারাও দেখবেন এভাবে যদি নির্বাচন না করি তাহলে যেই অবস্থা আসবে, যেই ভাব তৈরি হবে- সেইভাবে ভাবের মধ্যে রাজনীতিই করতে পারবেন না। এই কারণে সবাই যুক্তির কাছে আসতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি বার বার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পিছিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন তো বিদায় নিয়েছে, নো। আমরা তো তাকিয়ে দেখতে পাই, আমাদের সামনে কিন্তু এখনো দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্র যন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রত্মাতারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবায় চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিছিয়ে দেয়া যায় তার চক্রান্ত কিন্তু এখনো বিদ্যমান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন আসলে পরাশক্তির যে খেলা হয় সেই খেলা কিন্তু আমরা দেখতে পারছি। অর্থপাচার, লুটপাট, দুর্নীতির সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা সবাই বক্তৃতায় বলব, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আর কাজের সময় আসলে দেখা যাবে যে, দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে যাবে, এটার আত্ম-পর্যালোচনার সময় এসেছে এখনই। ফলে নামে একজন ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও জাতির ওপর থেকে ফ্যাসিজমের কালো থাবা কিন্ত ‍বিদায় নেয়নি। এজন্য আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জুলাই অভ্যুত্থানের ওই কঠিন চেতনা আমরা লালন করেছিলাম তাদের একটা জাতীয় ঐক্যের সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। আমি মনে করি এটি তার চূড়ান্ত মুহুর্ত আমরা অতিক্রম করছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, একে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকদের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলা্ই অভ্যুত্থানে শহীদ ৬ সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা প্রদান করেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ