রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন আজ উৎসবের আমেজ

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার কক্সবাজার সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে উৎসবের আমেজ বইছে। এ সময় তিনি ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করবেন। এর মধ্যে রয়েছে চান্দেরপাড়া এলাকায় ঝিনুকের আদলে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন ও মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মিত ১২শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বেলা ১১টার দিকে রেলস্টেশন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিকালে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী রেলস্টেশনসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এসব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

১৫ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মাতারবাড়ীর ১২শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্ত, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ।

দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের চিত্রও পালটে গেছে। বিশেষ করে সাগর ছোঁয়া রানওয়ে, মুক্তার রঙে ঝিনুকের মতো রেলস্টেশন, মেরিন ড্রাইভ, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানারকম প্রকল্প নিয়ে কক্সবাজারে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চোখে পড়ার মতো। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের এই জেলায় ছোট-বড় ৭৭টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা।

উৎসবের আমেজ : প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে কক্সবাজার জেলাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাতারবাড়ীর জনসভাস্থল। আইকনিক রেলস্টেশনসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চলছে স্বাগত মিছিল, মাইকিং ও প্রচার। আশা করা হচ্ছে, সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন এমপি বলেন, মাতারবাড়ীকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া হিসাবে জানেন। মাতারবাড়ীর প্রতি উনার আবেগ ও ভালোবাসা অগাধ। সেই মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়িত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। এতে দেশের অর্থনীতির গতি আরও বেড়ে যাবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি শেষ। রেলস্টেশন, মাতারবাড়ী সভাস্থলসহ সবকিছু সাজানো শেষ। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার মাত্র ১৮৮ টাকায়- রেল সচিব: ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চালু হচ্ছে ১ ডিসেম্বর। এই পথে পর্যটকসহ সব যাত্রী সর্বনিম্ন ১৮৮ টাকায় যাতায়াত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রেল সচিব হুমায়ুন কবির। শুক্রবার কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বোধনী প্রস্তুতি ঘুরে দেখে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান তিনি।

রেল সচিব বলেন, আশা করছি ১ ডিসেম্বর থেকেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর সেই ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন-এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে, সেই অনুযায়ী তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সচিব বলেন, ১ ডিসেম্বর শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। পর্যায়ক্রমে কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু হবে। ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয়, উত্তরাঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে করে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

১ ডিসেম্বর ট্রেন চালু হলেও কক্সবাজারের আইকনিক ঝিনুক রেলস্টেশনে সব রকম সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়ে রেল সচিব বলেন, পর্যায়ক্রমে স্টেশনটিতে বিভিন্ন সেবা চালু হবে।

২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বর্তমানের স্মার্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফ লাইন, মাতারবাড়ি বন্দরও হবে প্যারালাল অর্থনীতির লাইফ লাইন।

উল্লেখ্য, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ০.৬ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২.২ হতে ২.৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭.৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ি বন্দরের সাথে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলমান রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ