আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের বিরুদ্ধে ঢাকার আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুজনই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য চলতি বছর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হন।
পোশাককর্মী মো. রুবেলকে হত্যা করার নির্দেশদাতা হিসেবে তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। নিহত রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল মামলাটি রুজু করেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একদফা সরকার পতনের দাবিতে সংঘর্ষ চলাকালে ৫ আগস্ট পোশাক কারখানার কর্মী রুবেল গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রুবেল।
মামলায় মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে ২৮ নম্বর এবং ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌসকে ৫৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিন রুবেল আদাবরের রিংরোডে মিছিলে অংশ নেন। এ সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, সাহায্য, সহযোগিতা ও মদদে মিছিলে গুলি ছোড়া হয়। বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রুবেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৭ আগস্ট মারা যান।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবী জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক ভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে বিগত সরকারের সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিগত সরকারের নির্দেশে কঠোর অবস্থানে থেকে শিক্ষার্থীদের উপরে চড়াও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। ওইদিন দেশব্যাপী ছয় জনের মৃত্যু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র জনতা ফুসে ওঠে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন এক দফায় রূপ নেয়। আন্দোলনকে দমন ও নির্মূল করতে গিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সমর্থিত ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সহস্রাধিক মানুষ নির্মমভাবে গুলিতে নিহত হন। এ আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পরে পুলিশও মৃত্যুর শিকার হন। এ আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও সাধারণ মানুষের লাল বিপ্লবে বাংলা বসন্তের ফলে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিগত সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিদায়ী সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অপশাসন, হত্যা, গণহত্যা, গুমের সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিতরা দেশের বিভিন্ন আদালতে ও থানায় মামলা দায়ের করছেন।