ম্যাসাচুসেটসে ২১ বছর বয়সী একজন এয়ার ন্যাশনাল গার্ডসম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। মার্কিন প্রতিরক্ষা নথি ফাঁসের ঘটনায় তাকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছে। জ্যাক টেক্সেইরা নামক ওই তরুণের বিরুদ্ধে সামরিক গোপনীয়তা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর নথি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যার জেরে মিত্রদের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছিলো। জ্যাককে এফবিআই এজেন্টরা নর্থ ডাইটন শহরে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল।
নিউজ ফুটেজে দেখা গেছে, কালো চুল, একটি জলপাই সবুজ টি-শার্ট এবং লাল শর্টস পরা এক যুবককে সাঁজোয়া যানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এজেন্টরা নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময়ে তার দিকে রাইফেল তাক করে রাখা ছিলো। ওয়াশিংটনে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। টেক্সেইরাকে গ্রেফতার শ্রেণীবদ্ধ জাতীয় প্রতিরক্ষা তথ্য প্রেরণের অভিযোগের তদন্তের সাথে জড়িত। গারল্যান্ডের ইঙ্গিত থেকেই স্পষ্ট যে টেক্সেইরাকে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। আইনের অধীনে প্রতিটি চার্জ ১০ বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ বহন করতে পারে এবং প্রসিকিউটররা প্রতিটি ফাঁস হওয়া নথিকে তার অভিযোগে পৃথক গণনা হিসাবে বিবেচনা করতে পারে।
যার জেরে দীর্ঘ কারাদণ্ড হতে পারে টেক্সেইরার। গারল্যান্ড বলেছেন যে এয়ার ন্যাশনাল গার্ডসম্যানকে বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেলা আদালতে প্রাথমিকভাবে উপস্থিত করা হবে।
টেইক্সেইরা ম্যাসাচুসেটস এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের ১০২তম ইন্টেলিজেন্স উইং-এ “সাইবার ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমস ট্রাভেলম্যান” এর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে গার্ডে যোগ দেন। টেইক্সেইরাকে অনলাইন চ্যাট গ্রুপের নেতা বলে মনে করা হয়। যেখানে গত বছরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত গোপন নথির শত শত ছবি প্রথম আপলোড করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, জ্যাক টিক্সেরার নেতৃত্বাধীন গ্রুপটির নাম ‘থাগ শেকার সেন্ট্রাল’। গ্রুপটিতে ২০ থেকে ৩০ জন ব্যক্তি বন্দুকের প্রতি তাদের আগ্রহের কথা শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি বর্ণবাদী মিমস, ভিডিও গেমস শেয়ারও করা হয়েছে গ্রুপটিতে।
এদিকে নথি ফাঁস হওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পরপরই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন , ”মার্কিন কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাছে নথি ফাঁসকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে। আমি উদ্বিগ্ন যে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। আমি এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত।
দ্য গার্ডিয়ান প্রায় ৫০টি নথি দেখেছে। এর মধ্যে এমন কিছু নথি আছে যা ‘থাগ শেকার সেন্ট্রাল’ পোস্ট করা হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রায় ৩০০ টি নথি দেখেছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র কিছু অংশ এখনও অবধি রিপোর্ট করা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি নিয়ে যে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করা হচ্ছে তার চেয়েও পরিণতি আরো খারাপ হতে পারে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন: “আমাদের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি অপ্রকাশ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করাই, তাই জ্যাক টেক্সেইরার সমস্ত গতিবিধি ইঙ্গিত দেয় যে সে অপরাধমূলক কাজ করেছে।”
তদন্ত করে দেখা হবে যে ম্যাসাচুসেটসে একজন ২১ বছর বয়সী এয়ার ন্যাশনাল গার্ডসম্যান ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্র মোতায়েনসহ মার্কিন এবং মিত্র নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ-গোপন সামগ্রী কিভাবে অ্যাক্সেস করতে পারে। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকির মতে এই নথি ফাঁসের ঘটনা দেশের আস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের সাক্ষাৎকার নেওয়া থাগ শেকার সেন্ট্রাল গ্রুপের কিশোর সদস্যদের মতে, তাদের নেতা ওজি নামের এক ব্যক্তি টেক্সেইরা বলে কেউ নন। সরকারের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাইটের সদস্যরা। নতুন ফাঁস হওয়া কিছু তথ্যের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের জ্ঞান দেখানো নথি।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট করা একটি নথিতে মার্কিন কর্মকর্তারা বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) ইউক্রেনে রাশিয়ার হতাহতের পরিমাণ ঢাকতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অভিযুক্ত করেছে। পেন্টাগন থেকে ফাঁস হওয়া নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং শত্রু দেশগুলোর ওপর মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার সর্বোতভাবে এই নথি ফাঁস ঠেকাতে নিজেদের প্রচেষ্টা জারি রেখেছে।
সূত্র : দা গার্ডিয়ান