আরেক স্বপ্নজয়। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সফলভাবে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টা ১৯ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনটি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সফলভাবে পদ্মা সেতু অতিক্রম করায় দুইপাশে উৎসব বিরাজ করছে। পদ্মার এপারওপার রেলপথ যুক্ত হওয়ায় উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।
মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ সবার মাঝেই উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। স্বপ্নযাত্রায় ট্রেনটিকে পথে পথে অভ্যর্থনা জানান সাধারণ মানুষ। স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু সফলভাবে অতিক্রম করে ভাঙা থেকে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাওয়ায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২ ঘন্টা।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় আতশবাজির ঝলকানিতে এক বিশেষ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাঙালির মর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইনে লাল সবুজের ৭ বগির ট্রেনটি বীরের মত এগুচ্ছিল। পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন সেতু অতিক্রম আয়োজন ঘিরে এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। চারিদিকে উচ্ছ্বাস। ট্রেনটি দেখতে মাওয়া স্টেশনের আশপাশে মানুষ ভিড় জমায়। ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর সড়ক পথ চালুর পর বছর পেরুনোর আগেই প্রস্তুত এখন বহুমুখী এই সেতুর রেলপথও।
ট্রায়াল রান শেষে মাওয়া রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সেপ্টেম্বরে ঢাকা-ভাঙ্গা পথে রেল চলবে। তাই নতুন রেল পথের জন্য চীন থেকে ১শ’ কোচ আনা হচ্ছে। ৪৫ টি পৌঁছে গেছে, বাকি ৫৫টি শিঘ্রই আসবে। আজকে মূলত ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলে করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানি স¤পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ূন কবির প্রমুখ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, আজকে আমরা রেলে চড়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছি, এতে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন করেন তার পর থেকে আমরা কাজটা শুরু করার জন্য একটা প্রেশারে ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুলাই আমরা ব্রিজটা হাতে পাই।
তিনি বলেন, গত ২৯ মার্চ আমরা এই কাজটি সম্পন্ন করেছি। এতে আমাদের সেনাবাহিনী, রেলওয়ে এবং সিএসসি যারা ছিল সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। দেশের প্রথম পাথরবিহীন এই রেললাইন দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে। রেল এখন বিশেষ উচ্চতায়।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ট্রেন পরিচালনা করবো। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল পরিচালনা করবো। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি কমলাপুর থেকে মাওয়া অংশের কাজ আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের কাজ জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করাতে পারবো। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পুরো রেল সংযোগ প্রকল্পে যাত্রীবাহী রেল চলবে আগামী বছরের জুনে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক ।