শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, নিরাপত্তাহীনতায় শঙ্কিত প্রার্থীরা : আনিসুল

জাতীয় পার্টি ও জেপিসহ ১৮টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী ও রাজনৈতিক জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রধান এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। যে নির্বাচনে প্রত্যেক মানুষ নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। একই সঙ্গে সকল প্রার্থী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিরাপদে প্রচারণা চালাতে পারবে।

তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার গঠিত হয়, তবে সেই সরকার হবে স্থিতিশীল ও স্থায়ী। সে সরকার কার্যকর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে এবং এর মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা যা করণীয়, তা করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই দুই বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু তফসিল ঘোষণা করা হলেও এখনো দেশে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি। প্রার্থীদের জীবনও নিরাপদ নয়।

শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হলো। তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? এই পরিস্থিতিতে প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচন করবেন?

সংবাদ সম্মেলনে জাপার চেয়ারম্যান ও জোটের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, তফসিল ঘোষণা করায় আমরা আনন্দিত এবং এটিকে স্বাগত জানাই। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৭ দিন, যা খুবই কম। এই নির্বাচন সকলকে নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসন আজ ভাগাভাগির প্রশাসনে পরিণত হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে প্রশাসন ভাগাভাগি করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে নিরপেক্ষতা প্রয়োজন, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখনো কেয়ারটেকার সরকারের সময় রয়েছে। যদি তা নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে ইতিহাসে আপনাদের মূল্যায়ন ভালো হবে না। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, একজন প্রার্থীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়। তাহলে প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন? এটাকেই যদি উৎসবমুখর পরিবেশ বলা হয়, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। মব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সহিংসতা চলছে। জুলাই আন্দোলনের পরও যদি আগের মতো নির্বাচন হয়, তাহলে সেই আন্দোলনের মর্ম নষ্ট হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন একা কিছু করতে পারবে না। রাজনৈতিক দল ও নেতা-কর্মীদেরও দায়িত্ব রয়েছে।

ব্যারিস্টার আনিস বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচিত সরকার থেকে ক্ষমতা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের রূপে রূপান্তরিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছিল। আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও এখনো আমরা নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে দেখছি না।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে ফিরে তিনি দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে চরম সংশয় বিরাজ করছে। নভেম্বর মাসেই ৫৮টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই মাসে ৯ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১৯ জন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে রাজধানীতে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন খুন হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে ১ হাজার ৯৩১ জন মানুষ খুন হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে থানাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা হয়নি। এসব অস্ত্র বহু প্রার্থীর জীবন কেড়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীরবতায় আমরা চরমভাবে হতাশ। হাজারো অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে রেখে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। হলেও তা হবে চর দখলের মতো নির্বাচন।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান আগামী ২৫ তারিখ দেশে ফিরবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা তাকে দেশে স্বাগত জানাই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পূর্বে সকল প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হানাহানি, মারামারি ও জীবনহানির প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, এনডিএফ-এর প্রধান সমন্বয়কারী গোলাম সরোয়ার মিলন, জাতীয় ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু নাসের মো. ওহেদ ফারুক, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের চেয়ারম্যান আবু লায়েস মুন্না, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব মেজর (ডা.) শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান মির্জা আজম, স্বাধীনতা পার্টি (জেএসপি)-এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, ডেমোক্রেটিক পার্টি গণতান্ত্রিক জোটের চেয়ারম্যান এস. এম. আসিক বিল্লাহ, বাংলাদেশ সার্বজনীন দলের সভাপতি প্রিন্সিপাল নূর মোহাম্মদ মনির, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম. এ. জলিল, বাংলাদেশ লিবারেল গ্রিন পার্টির সভাপতি কে. সি. মজুমদার খোকন, বাংলাদেশ মাইনরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্টের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার দাসগুপ্ত।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ; প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরফুর রহমান খান, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, সরদার শাহজাহান, বেলাল হোসেন, নূরুল ইসলাম ওমর, ইয়াহইয়া চৌধুরী, নাজনীন সুলতানা, আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শাহ জামাল রানা, শেখ মাতলুব হোসেন লিয়নসহ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ