তালতলী উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের সরকারী ভতুর্কী মুল্যে দেয়া কম্বাইন হারভেস্টার ও টিলার মেশিন না দিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সুমন হাওলাদার, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বশির উদ্দিন ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামে- বেনামে কৃষি অফিস থেকে তারা এ মেশিন নিয়ে চরা মুল্যে অনাত্র বিক্রি করেছেন। এমন অভিযোগ করেছেন কৃষক শহিদুল ইসলাম, শাহ আলম তালুকদার ও জাহাঙ্গির হাওলাদার। এছাড়াও কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দিয়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এতে অন্তত তারা অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কম্বাইন হারভেস্টার ও টিলার মেশিন বরাদ্ধ দেয় সরকার । অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সুমন হাওলাদার, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বশির উদ্দিন ও মিজানুর রহমান প্রান্তিক কৃষকদের মেশিন না দিয়ে নামে-বেনামে মেশিন নিয়েছেন। পরে ওই মেশিনগুলো অধিক মুল্যে অনাত্র বিক্রি করে দিয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন হাওলাদার, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বশির উদ্দিন , মিজানুর রহমান দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কৃষকদের মেশিন না দিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনের নামে মেশিন নিয়ে চরা মুল্যে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়াও কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দিয়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা ভাতা আত্মসাৎ করেছেন।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ বশির উদ্দিন ও মিজানুর রহমান স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের ১৭ জন স্বজনের নামে মেশিন নিয়েছেন। ওই মেশিনগুলো তারা চরা মুল্যে বিক্রি করে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে পাচটি হারভেস্টার মেশিন এবং ১২ টি টিলার ও মাহেন্দ্রা মেশিন রয়েছে। ওই মেশিন গুলোর মধ্যে এখনো উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ বশির উদ্দিনের বাড়ীতে একটি মাহেন্দ্র ও একটি টিলার মেশিন অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। তার বাবা মোঃ মতিউর রহমান মৃধা বলেন, আমার ছেলে বশির উদ্দিন একটি মেশিন আমার নামে এনেছেন। আর একটি মেশিন কার নামে এনেছেন আমি জানিনা। গত দের বছর ধরে মেশিন দুটি ওই বাড়ীতে পড়ে আছে।
রোববার সরেজমিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। বশিরের বাড়ীতে থাকা টিলার মেশিনটি তার মা কাজলের নামে এনে বাড়ী রেখে দিয়েছেন। ওই মেশিনটি তিনি জাকিরতবক এলাকার কামালের কাছে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকার হইচই শুরু হলে বশির মেশিনটি তার বাড়ীতে এনে রাখেন।
অপর দিকে তার বাবা মতিউর রহমান মৃধা বড়ভাইজোড়া গ্রামের দেলোয়ার আকনের ছেলে ছত্তার আকনের কাছে একটি টিলার মেশিন এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এ মেশিনটি কার নামে তা তিনি স্বীকার করেননি। তবে ছত্তার আকন মেশিন ক্রয়ের কথা স্বীকার করে বলেন আমি মতিউর রহমান মৃধার কাছ থেকে ক্রয় করেছি। তবে কত টাকায় ক্রয় করেছেন তা স্বীকার করেননি।
এছাড়াও উপজেলার বাদুরগাছা গ্রামের নাশির উদ্দিন একজন দর্জি। দিন আনে দিন খায় কিন্তু তালতলী উপজেলা কৃষি অফিসের নথিতে ৩২ লক্ষ টাকায় একটি হারবেষ্টার মেশিন তার নামে ক্রয়ের তথ্য রয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুই জানেনা।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, তার প্রতিবেশী ও স্বজন মাহমুদুল হাসান সবুজের মাধ্যমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও বশির উদ্দিন তাকে এ মেশিনটি নিয়েছেন কিন্তু মেশিনটির কোন হদিস নেই। নাশির জানান,এক বছর পরে আমি জানতে পারি আমার নামে হারবেষ্টার মেশিন ছাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমি মেশিন সম্পর্কে কিছুই জানিনা। এমন দুর্নীতি যারা করেছেন তাদের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
সরকারী ভতুর্কি মুল্যের মেশিন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তাদের এমন কান্ড ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত তারা তালতলী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তদবির করে অনাত্র বদলি হন। বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সুমন হাওলাদার পিএইচডি করতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অছেন। অপর দুই কর্মকর্তা মোঃ বশির উদ্দিন কলাপাড়া উপজেলায় এবং মিজানুর রহমান গলাচিপা উপজেলায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে কর্মরত আছেন।
উপজেলার পচাঁকোড়িয়া ইউনিয়নের কলারং গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, শাহ আলম তালুকদার ও জাহাঙ্গির হাওলাদার বলেন, বছরের পর বছর ঘুরেও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটি মেশিন পাইনি। কিন্তু অফিসের কৃষি কর্মকর্তা সুমন হাওলাদার, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ বশির উদ্দিন ও মিজানুর রহমানকে যারা টাকা দিয়েছে তারাই মেশিন পেয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বশির উদ্দিন বলেন, আমার বাবা কৃষক তাই তার নামে মেশিন নিয়েছেন। কিন্তু মায়ের নামে কেন মেশিন নিয়েছেন এবং আপনার বাড়ীতে এখনো দুটি মেশিন রয়েছে ওইগুলো কার? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সুমন হাওলাদারের সঙ্গে তার মুঠোফোনে (০১৭৪৪৯৮৯৩৫৫) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
তালতলী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আবু জাফর বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি না।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ উম্মে ছালমা বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বরগুনা) আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম বলেন, পরবর্তি মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।