যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নাটকীয়ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা জানিয়েছেন ইলন মাস্ক।
এই মার্কিন বিলিয়নেয়ার তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আমেরিকা পার্টি নামে একটি দল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক দুই-দলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে।
তবে দলটি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইলন মাস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।
তবে তার দলের নেতৃত্ব কে দেবেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদের সময় মি. মাস্ক প্রথমবারের মতো এই দল গঠনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন।
এ কারণে তিনি ট্রাম্প প্রশাসন ছেড়ে দেন এবং সাবেক মিত্রের সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এই বিতর্কের সময়, মাস্ক এক্স-এ একটি জরিপ চালান, যেখানে ইউজারদের প্রশ্ন করা হয়েছিলো—যুক্তরাষ্ট্রে কি নতুন একটি রাজনৈতিক দল থাকা উচিত?
শনিবার নিজের পোস্টে সেই জরিপের কথা উল্লেখ করে মাস্ক লেখেন, “২:১ ব্যবধানে আপনারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল চান, আর আপনাদের সেটা দেওয়া হবে!
“আমাদের দেশকে অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেউলিয়া করার মানে হচ্ছে, আমরা আসলে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আছি, গণতন্ত্রে নয়।
“আজ, ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হলো আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।”
শনিবার পর্যন্ত, ফেডারেল ইলেক্টোরাল কমিশন দলটির আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের কোনো কাগজপত্র প্রকাশ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী দুই-দলীয় ব্যবস্থার বাইরে অনেক পরিচিত উঁচু মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকলেও, তাদের পক্ষে জাতীয়ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী জন সমর্থন পাওয়া এবং নির্বাচনে বাস্তব চ্যালেঞ্জ তৈরি করা বেশ কঠিন।
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবার্টেরিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি ও পিপলস পার্টির প্রার্থীরা রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প বা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর কমালা হ্যারিসকে হারাতে ব্যর্থ হন।
কয়েক সপ্তাহ আগেও মাস্ক ছিলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক, গত বছর নির্বাচনী সমাবেশে একসঙ্গে নেচেছেন, এমনকি মাস্ক তার চার বছরের ছেলেকে ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করতেও নিয়ে যান।
মাস্ক ছিলেন ট্রাম্পের অন্যতম আর্থিক সহায়তাকারী। তিনি ট্রাম্পকে পুনরায় হোয়াইট হাউজে ফিরিয়ে আনতে আড়াইশ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন।
নির্বাচনের পর মাস্ককে তথাকথিত “ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি” (ডজ)-এর নেতৃত্বে নিযুক্ত করা হয়, যার কাজ ছিল বাজেট খাতে ব্যাপক কাটছাঁটের জায়গা খুঁজে বের করা।
তবে মে মাসে প্রশাসন ছাড়ার পর, মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পের কর ও ব্যয় পরিকল্পনার সমালোচনা করেন, মূলত সেখান থেকেই বিরোধ শুরু হয়।
ট্রাম্প তার সেই আইনটিকে “বিশাল, সুন্দর বিল” বললেও, কংগ্রেসে তা অল্প ব্যবধানে পাশ হয় এবং এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট তাতে স্বাক্ষর দিয়ে তা আইনে পরিণত করেন।
এই বিশাল আইনে বড় বাজেট বরাদ্দ ও কর কমানোর ব্যবস্থার কথা বলা আছে। এবং আগামী দশকে এটি মার্কিন ঘাটতিতে তিন ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করতে পারে।
বৈদ্যুতিক পরিবহন জায়ান্ট টেসলার মালিক মাস্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্পের এই বিল গ্রিন ট্রানজিশন অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে স্থানান্তর বা টেসলার মতো পণ্যের জন্য ভর্তুকির ওপর জোর দেয়নি।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশাল সাইটে লেখেন, “ইলন সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পাওয়া মানুষ। ভর্তুকি না থাকলে ইলনকে হয়তো দোকান বন্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হবে।”
ট্রাম্প হুমকি দেন, ‘ডজ’ মাস্কের কোম্পানিগুলোর জন্য দেওয়া ভর্তুকি খতিয়ে দেখবে। ইলনের অন্য ব্যবসাগুলোর দিকেও ইঙ্গিত করেন তিনি।
মাস্ক মালিকানাধীন স্পস-এক্স যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য রকেট উৎক্ষেপণ করে, এবং স্টারলিংক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে স্যাটেলাইট সেবা দেয়।
বিবিসি।