চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটারের দীর্ঘ এ রেল পথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। দেশে এই রেল যোগাযোগে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
আজ নবনির্মিত রেলস্টেশনে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন ও রেল লাইন উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজার রেল যোগাযোগের সাথে যুক্ত হয়েছে। আজ গর্বিত হওয়ার দিন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সশরীরে উপস্থিত হতে পেরে সত্যিই খুব খুশি হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি রেলপথ উদ্বোধন করে আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আজ সেই দাবি পূরণ হয়েছে।’
নতুন এই রেল যোগাযোগ পর্যটন, শিল্পায়ন, ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়ানোর সাথে সাথে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করানোর নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বক্তৃতা করেন ।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরআগে প্রধানমন্ত্রী রেলস্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধনের মাধ্যমে, ব্রিটিশ আমলে প্রথম উদ্যোগ নেওয়ার ১৩৩ বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে।
ট্রেন লাইন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার থেকে একটি ট্রেনে চড়ে রামু যান। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন ১ ডিসেম্বর থেকে চলাচল শুরু করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতোমধ্যে তার সময়সূচী এবং ভাড়া নির্ধারণ করেছে। তবে ট্রেনের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি।
ট্রেনটির ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে প্রায় ৮ ঘন্টা ১০ মিনিট সময় লাগবে। এটি ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম এ দু’টি স্টেশনে থামবে।
ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ছেড়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নন-এসি শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত টার্মিনাল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত প্রসারিত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম নেভিগেশন চ্যানেলের উদ্বোধন এবং বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে। এর কার্যক্রম ২০২৬ সালে শুরু হওয়ার কথা।
তিনি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১২০০-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম)উদ্বোধন করবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন স্লোগান লেখা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে পুরো কক্সবাজার সাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে কক্সবাজারবাসী।
কক্সবাজার শহরে একটি রেল স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও সাতটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। রেললাইনটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করায় হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীদের চলাচলের সুবিধার্থে একটি ওভারপাসও নির্মাণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে দর্শনীয় আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন।
ছয় তলা স্টেশন বিল্ডিংয়ের আয়তন ১,৮২,০০০ বর্গফুট যার তিনটি প্ল্যাটফর্ম দৈর্ঘ্যে ৬৫০ মিটার এবং প্রস্থে ১২ মিটার।
এগুলো ছাড়াও এর পাশে রেলওয়ে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেল, ক্যান্টিন, লকার এবং গাড়ি পার্কিংও রয়েছে।
এই স্টেশন দিয়ে দিনে প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে এবং পর্যটকরা তাদের লাগেজ স্টেশন লকারে রেখে সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী এর আগে ৩ এপ্রিল ২০১১ সালে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের রামু-ঘুমধুমের মধ্যে রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।