আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতার লোভে জনগণের সম্পদ বিক্রি করব, সেই বাপের মেয়ে আমি না।
শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। কিন্তু ক্ষমতায় থাকার লোভে দেশের সম্পদ বিক্রি করবো এমন বাপের মেয়ে আমি না।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল গ্যাস বিক্রি করার। শুধু ক্ষমতার লোভে বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকবো, সেই বাবার মেয়ে আমি না। আমরা সেটা চাইনি, কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য। দেশের মানুষের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা বাঙালি শিক্ষা-দীক্ষা সবদিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলাম। সবসময় আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হতো। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জয়লাভ করে। কিন্তু বেশিদিন প্রাদেশিক ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। যে অল্প কয়েকদিন ক্ষমতায় ছিল সে সময়ের মধ্যে শেরা বাংলা যে সরকার গঠন করেছিলেন তার মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একজন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। যখন সংগঠনটি হয়, তখনও আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে জেলে ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিদ্যুৎ বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা এবং তেজগাঁও শিল্প নগর সবই কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন হয়েছে। তার বাদে কিছু হয়নি। শুধু তাই নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এবং শহীদ মিনার নির্মাণ করার প্রকল্প আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। আমরা যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এনে দিয়েছে।
দেশসেবায় আওয়ামী লীগের অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের সেবক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর বাংলাভাই সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী দল বিএনপি ভেবেছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করবে। কিন্তু তারা বাংলার মানুষকে চেনেনি। জনগণের সম্পদ বেচবে আর জনগণের অর্থ লুটপাট করবে, এটা এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি।
কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন কাজ শুরু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলেন। কেউ বলেন, কিছুই নাকি হয়নি। তাদের বলতে চাই, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কোথায় ছিল দেশ? আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের একটু কষ্ট যাচ্ছে। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক চক্রান্ত আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে দেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে জনগণের জন্য; জনগণের সেবা করতে।
সরকারপ্রধান বলেন, এক সময় অনেক মানুষের নুন-ভাত জুটাতে কষ্ট হতো। এখন কেউ মাংস পাচ্ছে না বলে সেটা নিয়ে কথা হয়। তার মানে নুন-ভাত, ডাল-ভাত থেকে মানুষের চাহিদা মাংস-ভাতে উন্নীত করতে পেরেছি। মানুষ তো মাংস-ভাত খাওয়ার সামর্থ্য পেয়েছে।
‘বিএনপির আমলের চেয়ে আমাদের বাজেট ১০ গুণ বাড়িয়েছি। বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাজেট কমাইনি আমরা’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি পাওয়াই অনেক কষ্টসাধ্য। মাঝখানে কয়লা না থাকায় রামপাল-পায়রা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মানুষকে বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে হয়।
এ সংকট আগামী দিনে আর না হওয়ার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যখন রামপাল কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র করতে যাই, তখন তো অনেকে প্রতিবাদে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধের সময়, তখন তারা আনন্দ মিছিল করেন কেন? তারা জানে, সেটা করতে গেলে মানুষ পিটিয়ে চ্যাপটা করে ফেলবে।