তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশকে জাতির পিতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে আমাদের চলচ্চিত্র অবদান রাখবে এবং চলচ্চিত্র সংসদ সেখানে নেতৃত্ব দেবে।’
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর ও ফেডারেশন অভ ফিল্ম সোসাইটিজ অভ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৫৭ সালে ঢাকায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সময়ের আবর্তে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলচ্চিত্র শিল্প আজ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বহু চলচ্চিত্র অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। গত বছরের শেষ দিকে কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে দুপুর একটায় আমাদের সিনেমা দেখার জন্য সকাল নয়টা থেকে এক মাইল লম্বা লাইন হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু হচ্ছে, সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়ছে। সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে এক হাজার কোটি টাকার সহজ ঋণ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’
করোনায় সব থমকে না গেলে সিনেমা শিল্প ইতিমধ্যে আরো এগিয়ে যেতো উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প আরও দৃঢ় অবস্থানে আসবে এবং দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ববাজারে আরও সমাদৃত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ঠিকই বলেছেন, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন রাজপথের আন্দোলন নয়, নিজেকে পরিশীলিত করার, চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার আন্দোলন। এবং শুধু চলচ্চিত্র ক্ষেত্রেই নয়, সারাদেশেই সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রয়োজন যা আমাদের তরুণদের কুসংস্কারমুক্ত পথ দেখাবে।’
অনুষ্ঠানে দেশের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ছয় দশকের সেরা চলচ্চিত্র সংসদ সম্মাননা’ হিসেবে শতাধিক চলচ্চিত্র সংসদের মধ্য থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ হীরক সম্মাননা এবং ১৪ টি সংসদকে সুবর্ণ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অভ বাংলাদেশ”র সভাপতি লাইলুন নাহার স্বেমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রকার সালাউদ্দিন জাকী বিশেষ অতিথি এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। বক্তব্য রাখেন বর্ষপূর্তি উৎসব জাতীয় কমিটির আহবায়ক চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম এবং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন। ‘জলের গান’ ব্যান্ডের সংগীত ও মঙ্গল দীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূত্রপাত ঘটে।
চলচ্চিত্র সংসদের ৬০ বছর এবং ফেডারেশনের ৫০ বছর পূর্তি জাতীয়ভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে ফেডারেশনের বছরব্যাপি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব, নীতিনির্ধারণী সেমিনার, আন্তর্জাতিক সেমিনার, ১০টি জেলায় চলচ্চিত্র কর্মশালার আয়োজন, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, দেশের ৫০ বছরের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র উৎসব, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ ও নৌ-ভ্রমণ।
উল্লেখ্য, দেশে চলচ্চিত্র শিক্ষা বিস্তার, চলচ্চিত্র সাহিত্যের বিকাশে অবদান রাখা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন ১৯৬৩ সালে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৭৩ সালের ২৪ অক্টোবর ফেডারেশন অভ ফিল্ম সোসাইটিজ অভ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেডারেশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন চলচ্চিত্রাচার্য আলমগীর কবির।