‘বোতল বন্দী’ হয়ে পড়েছে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ। দলটির শীর্ষ দুই নেতার ঈশারায় চলছে সবকিছু। তাদের নির্দেশ ছাড়া ফতুল্লাতে কিছুই করা যায় না। ঝুট, ড্রেজার, জমি, তেল, হাট, ঘাট থেকে শুরু শিল্পাঞ্চল ফতুল্লায় কে কোন ব্যবসা করবে তার সবই ঠিক করেন এই দুই নেতা। তাদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে ব্যবসাতো দূরের কথা, রাজনীতিতেও টেকা সম্ভব নয়। এনিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মাঝে ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রকাশ করারও কোন জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
সূত্রমতে, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে এম সাইফ উল্লাহ বাদল ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শওকত আলী টানা দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ফলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা এই দুই নেতা এখন অঘোষিত সম্রাট হয়ে উঠেছেন ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বাদল-শওকতের সামনে খাবি খেতে হয়ে নিজেদের দলের অন্য নেতাদের। তাদের দু’জনকেই দলীয় নেতাকর্মীরা মুরব্বি বেশ শ্রদ্ধা করেন। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে তারা একচ্ছত্র আধিপাত্য বিস্তার করে রেখেছেন নেতাকর্মীদের উপর। তাদের এমন আচরনে অনেক নেতাকর্মীই এখন তাদের উপর রুষ্ট। তবুও মুখ ফুঁটে কিছুই বলতে পারছেন না তারা।
দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ৭১ সদস্য বিশিষ্ট ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি হলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কোন নেতার কোন মূল্যায়ন নেই কারো কাছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাদের নিজেদের কব্জায় নিয়ে রেখেছেন বাদল-শওকত। ফলে সব নেতাদেরই ধর্ণা দিতে হয় তাদের কাছে। তাদের অনুমতি ছাড়া ফতুল্লায় কোন ব্যবসা করা সম্ভব নয় কারো পক্ষে। দলকে এভাবে কুক্ষিগত করে রাখাটাকে দলের জন্যই ক্ষতি হিসেবে দেখছেন সবাই। কিন্তু মুখ ফুঁটে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
কাশীপুর ইউনিয়নের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে আ’লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আলাদা কোন সংগঠন নয়। সব চলে সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদলের নির্দেশে। একজন ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নেতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকে মানেন না। কারন ওয়ার্ডের ওই নেতা সরাসরি বাদল সাহেবের রাজনীতি করেন। তাই তার ‘পাওয়ার’ অন্য সবার চেয়ে আলাদা। দলের অনেক কর্মী পদে না থেকেও শুধু মাত্র বাদল সাহেবের দরবারে হাজিরা দেয়ায় নেতাদের চেয়ে বেশী ক্ষমতা রাখেন ওই কর্মী। দলীয় শৃঙ্খলা এসব কারনে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে।
একই অবস্থা বিরাজ করছে বক্তাবলী ইউনিয়নেও। দলটির তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। নদী বেষ্টিত এ ইউনিয়নে যা কিছু করতে হয়, সব তার মাধ্যমেই করতে হয়। দলীয় নেতারা ব্যবসার সুযোগ না পেলেও শওকত চেয়ারম্যানের সাথে সখ্যতার কারনে অনেক বিএনপি’র নেতারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করে আসছেন বক্তাবলীতে। এখানেও দলীয় শৃঙ্খলা নেই। কেউ কাউকে মানতে চায় না। দলীয় হাই কমান্ড বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
ফতুল্লা আ’লীগের এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য সভাপতি ও সম্পাদককেই দায়ী করছেন সবাই।
তবে এসব বিষয়ে জানতে থানা আ’লীগের সভাপতি এম সাইফ উল্লাহ বাদলকে ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি।