শনিবার, ১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দিনভর উত্তেজনা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকীতে সিপিবি-জাসদের আলোচনা সভা

নিউজফ্ল্যাশ প্রতিবেদক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকীর দিনে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে দিনভর ছিল উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার থেকেই এখানে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই প্রবেশমুখে যানবাহন আটকে দিয়ে মানুষের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় সাঁজোয়া যান ও জলকামান। শুক্রবার সকাল থেকে ধানমন্ডি এলাকায় বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র-জনতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

সকাল থেকে ‘কিলার হাসিনা’, ‘মাসুদ তুমি ভালো হও’, ‘কাউয়া কাদের’সহ বিভিন্ন ফ্যাসিবাদবিরোধী গান বাজিয়ে সেখানে চলে প্রতিবাদ কর্মসূচি। ধানমন্ডি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাকিব হাসান যুগান্তরকে বলেন, ১৪ আগস্ট রাত থেকে তারা গান বাজিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আয়োজনটি ধানমন্ডি এলাকার ছাত্র-জনতা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে করা হয়েছে।

এরই মধ্যে এদিন শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক সন্দেহে তাদের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। ফুল দিতে এসে মারধরের শিকার হন এক রিকশাচালক। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব পাশে নিজে রিকশা চালিয়ে আসেন আজিজুর রহমান। তার রিকশার সামনে একটি ফুলের তোড়া রাখা ছিল। আজিজুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আসিনি। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই আমার হালাল টাকা দিয়ে কেনা ফুল নিয়ে এসেছি। এর কিছুক্ষণ পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে থাকা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন এবং মারধর করেন। এ সময় তার রিকশাটি রাস্তার পাশে উলটে ফেলে রাখা হয়। পরে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়।

সকাল সোয়া ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশে তিন সন্তানসহ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এক দম্পতি। তখন তারা স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। জানা যায়, ওই দম্পতি পিরোজপুর থেকে এক মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকায় জুতার ব্যবসা করা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, তিনি শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তবে তার স্ত্রী জানান, তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে অনেক চেষ্টা করেও আটকে রাখা যায়নি।

একই সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব পাশে পৃথক দুই ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানাতে এসে হেনস্তার শিকার হন। তাদের কলার চেপে ধরাসহ চড়-থাপ্পড়ও মারেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ তাদের ছাড়িয়ে রিকশায় পাঠিয়ে দেয়। সকাল ১০টার দিকে শেরেবাংলা নগর থেকে আসা এক নারীও ফুল দিতে এসে হেনস্তার মুখোমুখি হন। হালিমা নামের ওই নারী বলেন, শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগ করি। পরে পুলিশ তাকে রিকশায় করে পাঠিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও তিনজন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে এসে হেনস্তার শিকার হন।

গুলশান ছাত্রদলের কর্মী তানজীব বলেন, ধানমন্ডিতে মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে এবং আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি আমরা এখানে আছি। দুই-তিনজন আওয়ামী লীগের লোক এসেছিল, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।

পুলিশ বলছে, শুক্রবার ৩২ নম্বর থেকে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হক যুগান্তরকে বলেন, এখানে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। কিছু উৎসুক জনতা ব্যারিকেড পেরিয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি এখানে দাঁড়ানো যাবে না এবং সরে যেতে হবে। আজকের দিনে এখানে দাঁড়ানোকে আমরা সমীচীন মনে করিনি।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং জাসদের দুই অংশ। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি, তোপখানা রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাসদ এবং গুলিস্তানের শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) উদ্যোগে আলোচনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সামাজিকমাধ্যমে তারকাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে নানা ধরনের স্ট্যাটাস দেন।

সিপিবির আলোচনা সভা : সিপিবির উদ্যোগে শুক্রবার বিকালে মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন-কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, রাগীব আহসান মুন্না, হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল, সদস্য জাহিদ হোসেন খান, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সভায় নেতারা বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল ক্যু সংঘটিত হয়। এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়ার ধারা নিরঙ্কুশ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বাংলাদেশ জাসদের আলোচনা সভা : শুক্রবার সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের কেন্দ ম সিকদার, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, রোকনুজ্জামান রোকন। সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ মনজু। নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশ থাকলে বঙ্গবন্ধু থাকবেন, জয় বাংলা থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এক পাল্লায় মাপা হলে ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

জাসদের স্মরণসভা : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এদিন বিকালে নগরীর গুলিস্তানের শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করে। জাসদের সহসভাপতি শফিউদ্দিন উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহসীন, মীর্জা মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন প্রমুখ। নেতারা বলেন, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি এক, অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য সত্ত্বা। তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠী বা পরিবারের সম্পত্তি নন। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ