ঠাকুরগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তুমুল দর্শকপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র শুটিংয়ে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানটি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন হানিফ সংকেত।
দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ নানা বিষয়ই তুলে আনা হয় এই অনুষ্ঠানে। । ‘ইত্যাদি’র এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের রাজবাড়ীতে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর দৃশ্যধারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু অনুষ্ঠাস্থলে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশ করে একাধিক গণমাধ্যম। ‘ইত্যাদি’ ধারণের সেই সময়ের কয়েকটি ভিডিও এবং ছবিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক, নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত।
ঘটনার বিষয়ে বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব বলেন, রানীশংকৈল উপজেলায় টংকনাথের রাজবাড়ি নামে একটি জমিদারবাড়িতে দৃশ্যধারণের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠানের আগে আট হাজার প্রবেশ পাস দেয়া হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত দর্শক উপস্থিত হয়।
এ কারণেই অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। নিরাপত্তার দায়িত্বে আর্মি ও পুলিশের উপস্থিতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, যখনই আমরা অনুষ্ঠান শুরু করলাম। দর্শক তালি দিলো। যেই আমি মঞ্চে এলাম, শুনলাম, চারদিক থেকে তিন কিলোমিটারের মতো রাস্তা কয়েক লাখ লোক। এত মানুষকে আমি কোথায় বসতে দেব। লোকজন বাঁশের ব্যারিকেড ছিল, তা ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তখন তো ম্যাসাকার অবস্থা। ওখানে নারী আছেন, শিশু আছে, আছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এরপর পুলিশ থামানোর চেষ্টা করছে, আমিও করছি। অস্থির অবস্থা। কেউ চেয়ার–ছোড়াছুড়ি করছে।
হানিফ সংকেত বলেন, অনুষ্ঠানস্থলের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় প্রশাসনকে ডেকে বললাম, এভাবে অনুষ্ঠান করা যাবে না। মানুষ শান্ত হোক, তারপর অনুষ্ঠান শুরু করব। আপাতত আমরা অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখি। অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ করে দিয়ে লাইট বন্ধ করে জানিয়ে দিলাম, অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছে না। আপনারা শান্ত হন। এ-ও অনুরোধ করেছি, চলে যান। পরবর্তী সময় আমরা চিন্তা করব কী করা যায়।
ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে জনপ্রিয় এই উপস্থাপক বলেন, অনুষ্ঠান শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সাড়ে সাতটা কি আটটার সময় আমি মঞ্চে উঠার পরই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর রবি চৌধুরী ও লিজার গানের অর্ধেক হওয়ার পর সেকেন্ড বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ রেখে রাত সাড়ে ৯টার পর আবার শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শুটিং করেছি।
হানিফ সংকেত বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখানে কিন্তু কোনো ঝগড়া নেই, মারামারি নেই। হামলা নেই। সবাই পরে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা এ-ও বলেছে, আপনাদের ভালোবাসে, এটা তো অন্যায় না। ভালোবাসি বলেই এই ঘটনা ঘটেছে। এখানে কেউই মারামারি করতে আসেনি, হামলাও করতে আসেনি। এখানে এসেছিল উৎসুক জনতা। তারা এসেছে ‘ইত্যাদি’ দেখবে, আমাদের দেখবে, ‘ইত্যাদি’র শুটিং দেখবে বলে।